তৃণমূল ভবনে দলের কোর কমিটির বৈঠকে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বিজেপির সঙ্গে দলের একাংশ যোগাযোগ রাখছেন। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে মমতা হুঁশিয়ারী দিয়ছেন, “আমি জানি, দলের সাত-আট জন বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদর্শের সঙ্গে কোনও আপোষ করা হবে না। দলবিরোধী কাজ করলে তাড়িয়ে দেব।"
তবে শুধু বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেই থামেননি তিনি। জানা গিয়েছে, কেন লোকসভায় ৪২- এ ৪২ বলছে তৃণমূল, তাও দলীয় নেতৃত্বের কাছে তিনি পরিস্কার করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লিতে অল-আউট লড়াই হবে। বিজেপির বিরুদ্ধে সবাই একজোট। কিন্তু বাংলায় একা লড়াই। এখানে কংগ্রেস, সিপিএম সব আলাদা। যে যার মত লড়াই করবে। এদিন কোর কমিটির বৈঠকে দলের পদাধিকারী ছাড়াও সাংসদ, মন্ত্রী, বিধায়করাও হাজির ছিলেন। রোজ ভ্যালি কাণ্ডে ইডি তলব করায় হাজির হতে পারেননি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে বাংলায় ঢুকতে না দেওয়ার জন্য সিপিএমের সঙ্গে কি জোট বাঁধছেন মমতা?
লোকসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক পIরবির্তনের মাধ্যমে দলে ইঙ্গিতবাহী বার্তা দিলেন মমতা। একইসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে লড়তে বামেদেরও ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিতে আমন্ত্রন করা হবে বলে জানিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। বিজেপি ও আরএসএসকেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, "উৎসবের সময় শান্তি বজায় রাখতে হবে। দঙ্গা লাগানো হতে পারে। কোনও প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না। বিজেপি, আরএসএস ও বজরঙ্গ দল আশান্তি বাঁধাচ্ছে।"
কলকাতার মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় কে দলে আরও গুরুত্বহীন করে দেওয়া হল। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দলের সভাপতি করা হয়েছে দলনেত্রীর একান্ত অনুগত শুভাশিস চক্রবর্তীকে। এই জেলায় তাঁকে সাহায্য করবেন ফিরহাদ হাকিম ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছে দল। অন্যদিকে দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁকে বাড়তি তিন জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মমতা বলেন, "নদিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে বাড়তি দায়িত্ব পালন করবে শুভেন্দু। নদিয়ায় তাঁর সঙ্গে থাকবেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জঙ্গলমহলে থাকবেন পার্থ ও সুব্রত বক্সী।" কোচবিহারের দায়িত্বে রয়েছেন সুব্রত বক্সী। তাঁকে সাহায্য করবেন অভিষেক।
রাজনৈতিক মহলের মতে, শোভনের সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিড়ম্বনায় পড়েছে। তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক থানা ও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এবার দল তাঁকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিল। এর আগে তাঁকে পরিবেশের মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব পেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর পাশাপাশি অভিষেককেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে দল।
জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্মশিবির কিছুটা হলেও চমক দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই পূর্ব মেদিনীপুরের ভূমিপুত্রকে জঙ্গলমহলের বাকি দুই জেলার দায়িত্ব সঁপে দিলেন। জঙ্গলমহলকে হাতের তালুর মত চেনেন শুভেন্দু। অভিষেকের সঙ্গে কিছুটা সাযুজ্য রেখেই শুভেন্দুর দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। দলের একাংশের মতে, বিশেষ কারণেই শুভেন্দুর দায়িত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে।