Advertisment

দলনেত্রীর নির্দেশই সার, পুরপ্রার্থী নিয়ে তৃণমূলে চরম কোন্দল, প্রশ্নের মুখে সংগঠনের রাশ

২রা ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

author-image
Joyprakash Das
New Update
Kunal Ghosh Saokat Molla tmc Coordinator in South 24 Parganas instead of Arup Roy

মমতা ও অভিষেক ব্যানার্জী।

২ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন হয়েছে নেতাজি ইন্ডোর স্টিডেয়ামে। সেখানে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের পুনরায় নির্বাচিত চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার ঠিক দুদিন পরে রাজ্যের ১০৮টি পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করে তৃণমূল কংগ্রেস। তারপর থেকেই ঘোষিত দলীয় প্রার্থীর প্রতিবাদে মন্ত্রী, বিধায়কের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ থেকে সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা পথে নেমে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এমনকী বহু জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হয়েছে। পুরপ্রার্থী ঘোষণা নিয়ে শুধু বিভ্রাট নয়, সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোয়াতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে দলের সাংগঠনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে।

Advertisment

প্রার্থী ঘোষণার দুদিন আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, ‘পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্ব করবেন না। দল ছাড়া কিছুই নেই। দল একটাই, তৃণমূল। চিহ্নটা জোড়াফুল।’ কিন্তু পুরভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর কি রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। প্রথমে তালিকা নিয়ে বিভ্রাট। তারপর কিছু প্রার্থীর নাম পরিবর্তন। ক্ষোভের আগুনে উত্তপ্ত বাংলা। দলনেত্রীর নির্দেশের পরও প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। দলের দ্বন্দ্ব মেটাতে ময়দানে নামাতে হয়েছে পুলিশও। প্রার্থী তালিকার বিভ্রাটে সাংগঠনিক ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। রাজ্যে একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার পরও এই বেহাল দশায় অদূর ভবিষ্যতের অশনি সংকেত দেখছে অভিজ্ঞ মহল।

দু'দফায় পুরপ্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর নানা তত্ব খাড়া করা হচ্ছে। কোনটা আসল কোনটা নকল তা নিয়ে হিমসিম অবস্থা নেতা থেকে কর্মীদের। শনিবার রাত থেকে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। অফিসিয়ালি সাংগঠনিক নির্বাচন শেষে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর ঘাসফুল শিবিরের ল্যাজে গোবরে অবস্থা। রাজনৈতিক মহলের মতে, অজুহাত বা যুক্তি যাই বলা হোক না কেন এই ধরনের বিভ্রাট রাজনৈতিক দলের কোনও কৌশল হতে পারে না।

প্রার্থী ঘোষণার পর দক্ষিণবঙ্গের শক্তঘাঁটিতেও তৃণমূলের তুলকালাম অবস্থা। পূর্ব মেদিনীপুরে রাজ্যের মন্ত্রী ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় বিধায়কের বাড়ির সামনে পুরপ্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দলের কর্মীরা। বর্ধমানে পুরপ্রশাসকদের পাঁচজনের চারজনকেই প্রার্থী করেনি দল। যদিও তার মধ্যে এক পুরপ্রশাসকের ছেলে যুব নেতা টিকিট পেয়েছেন। গত তিন মাসে বর্ধমান পৌরসভা প্রায় ৫কোটি টাকার ওপরে বকেয়া কর আদায় করেছে। এছাড়া অনলাইনে পরিষেবাসহ নানান উন্নয়ন হওয়া সত্বেও পুরপ্রশাসকরা টিকিট না পাওয়ায়, শহর তৃণমূ্লের একটা বড় অংশ ব্যাপক ক্ষুব্ধ। প্রার্থী বদলের দাবিতে শহরজুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলেছে। একই হাল রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যের এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শাসকদলের টিকিট পেতে আগ্রহী হবে এটাই স্বাভাবিক। কাউন্সিলর হওয়ার আগে তাঁদের পেশা ও সম্পত্তির হিসেব ও কাউন্সিলর হওয়ার পর তাঁদের ঠাট-বাট, বাড়ি-গাড়ি, ভ্রমণ সম্পর্কে অবগত হলেই স্পষ্ট হবে, কেন টিকিটের এই চাহিদা। এই সংখ্যাটা কম নয় বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। এই অবস্থায় দু'দফায় ঘোষণা হয়ে গেল তৃণমূল প্রার্থীদের নাম। কোন যাদুবলে, কোন যোগ্যতায় কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলের একাংশ। তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসর পর, দলনেত্রীর হুঁশিয়ারির ২ দিনের মধ্যে প্রর্থীর নাম ঘোষণার পর দলের কঙ্কলাসার অবস্থা। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন পৌরনির্বাচন হয়নি তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।

abhishek banerjee Municipal Election Mamata Banerjee tmc
Advertisment