মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছেন না বীরেন সিং। শুক্রবার দুপুরে এই দাবি করেছেন মণিপুর সরকারের মুখপাত্র এবং মন্ত্রী সাপম রঞ্জন সিং। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই থেকেই তাঁর মুক্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ার জল্পনাকে চরমে ওঠে।
শুক্রবার দপুর ২টো ২০ নাগাদ ২০ জন বিধায়কের এক প্রতিনিধিদল নিয়ে রাজ্যপালের বাসভবনের দিকে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির বাইরে প্রচন্ড ভিড় দেখা যায়। ফলে বেরতে পারচ্ছিলেন বীরেন সিং। ফলে ঘরে ঢুকে যান তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই, রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রীর নেতৃত্বে কয়েকজন মন্ত্রী ভিড়ের মাঝে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন। মন্ত্রী সুসিন্দ্রো মেইতেই বীরেন সিংয়ের পদত্যাগপত্রটি পড়ে শোনান। সেই পদত্যাগপত্রটিই মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যপালের কাছে জমা দেওয়ার কথা ছিল। এরপর ওই ভিড়ের মধ্যে থাকা কয়েকজন মহিলার হাতে কাগজটি তুলে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই সেটি ছিঁড়ে ফেলেন ওই মহিলারা।
সরকারের মুখপাত্র এবং মন্ত্রী সাপম রঞ্জন সিং বলেছেন, 'আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জনগণের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর পরে, কয়েকজন মন্ত্রী লোকজনকে বলতে বাইরে গিয়েছিলেন যে তিনি পদত্যাগ করছেন না।'
বীরেন সিংয়ের এর ঘনিষ্ঠের কথায়, 'মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর বাসভবন ছেড়ে রাজভবনের দিকে যেতে দেওয়া হয়নি।'
জাতিদাঙ্গায় লেইমাখং এলাকা বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত হয়। গুলিতে এক মেইতি নিহত হন। এরপর নিহতের দেহ ইম্ফলে আনা হয়। সেখানে জড়ো হওয়া বিপুল সংখ্যক লোক সিংয়ের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। অনেক প্রতিবাদকারীদের মধ্যে মীরা পাইবিসও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। পরে মণিপুর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠের দাবি, 'গতকালের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে তার পদত্যাগের আহ্বানে। এমন অনেক স্লোগান ছিল যেখানে মনে করা হচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রী জনগণের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে দায়িত্ব সামলাতে রাজি ছিলেন না তিনি। ফলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন বীরেন সিং।'
এদিন জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠলে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর বাসভবন ছেড়ে যান, কিন্তু নিরাপত্তার কারণে শীঘ্রই ফিরে আসেন তিনি। এই সফরের পরেই তার মন্ত্রিপরিষদের দুই মন্ত্রী - গোবিন্দদাস কোন্থৌজাম এবং সুসিন্দ্রো মেইতি - বীরেনের পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছিলেন, যা তাঁরা মেরা পাইবিসের কাছে হস্তান্তর করেছিল যারা এটি ছিঁড়েছিল।
এদিকে, সেখানে জড়ো হওয়া মহিলাদের মধ্যে একজন সরোজিনী লেইমা সকালে বলেছিলেন, 'মণিপুরের সমস্ত মায়েরা এখানে জড়ো হচ্ছেন কারণ তারা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি নন। মাটির সন্তান হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং মানুষকে রক্ষা করতে হবে। তিনি পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি শাসন অনিবার্য হবে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।'