দীর্ঘ অশান্তির চাদর সরিয়ে ক্রমশ স্বাভাবিক হওয়ার পথে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম পার্বত্য রাজ্য মণিপুর। মে মাস থেকে যে জাতিগত হিংসার সূত্রপাত হয়েছিল, তাই এই পার্বত্য রাজ্যের শিক্ষা শিকেয় উঠেছিল। ঘরবাড়ি ছেড়ে আমজনতার আশ্রয় হয়েছিল ত্রাণশিবিরে। সেই পরিস্থিতি মাস দুয়েক বাদে অনেকটাই বদলে গেছে। বুধবার থেকে স্কুলমুখো হয়েছে শিশুরা।
সেরা বন্ধু থাজা এবং সেলিনার জন্য এটি ছিল একটি বিশেষ দিন। দুই মাসেরও বেশি সময় একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি অষ্টম শ্রেণির এই দুই ছাত্রী। হিংসার আবহ সামান্য কাটতেই বুধবার তাদের স্কুল খুলল। প্রথম দিন ১৩ বছর বয়সি এই দুই ছাত্রীর পাশাপাশি তাদের ওয়াংখেই হাইস্কুলে সাকুল্যে ১১৩ জন পড়ুয়া এসেছিল। তাদের নিয়েই প্রথম দিন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়েছে। আগামী দিন ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। স্কুলের মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৭১। শিক্ষকদের আশা, সব ক্লাসে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার পর ওয়াংখেই হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়বে।
এই ব্যাপারে ওয়াংখেই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রঞ্জিতা দেবী বলেন, 'আমাদের আজকের উপস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল। অভিভাবকরা স্কুল খোলা আছে কি না, তা জানার জন্য আমাকে ফোন করছেন। আমি জানিয়েছে, হ্যাঁ স্কুল খুলেছ। তবে, এখনও অনেকের মনে ভয় আছে। বিশেষ করে যাঁরা ইম্ফলের চৌহদ্দিতে থাকেন। অনেক অভিভাবকেরই বক্তব্য, পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, শোনা যাচ্ছে প্রশাসন যে কোনও সময় কার্ফু তুলে নিতে পারে। আর, তারপরই যে আগের মত হিংসা ছড়াবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়!'
আরও পড়ুন- ‘৮৩ বছর হল, আপনি থামবেন না?’ শরদ পাওয়ারকে উপেক্ষার বার্তা ভাইপো অজিতের
প্রধান শিক্ষিকা বলে চলেন, 'আমাদের স্কুলে অভিভাবক এবং পড়ুয়াদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। কোনও বিজ্ঞপ্তি থাকলে সাধারণত, আমরা সেই গ্রুপে দিয়ে দিই। কিন্তু ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞার জন্য এবার আমরা অভিভাবকদের কাছে বিজ্ঞপ্তি ঠিকমতো পাঠাতে পারিনি। তাঁদের আশ্বস্ত করতে পারিনি। আর, তার জন্যই প্রথম দিন পড়ুয়ার সংখ্যা এত কম হল। আমি অভিভাবকদের বলেছি, ভয়ের কিছু নেই। অন্য বাচ্চারা এসেছে। আশাকরি, আগামী দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গেই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা আগের মতই বাড়বে।'