/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/07/21st-july-Cover-Pic.jpg)
২১ জুলাইযের প্রস্তুতি। ছবি: শশী ঘোষ।
ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে শহিদ দিবসের মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ। ২১ জুলাই শহিদ দিবস সফল করতে সবাই ব্য়স্ত। সেখানে দফায় দফায় পরিদর্শনে আসছেন রাজ্য়ের মন্ত্রী এবং শাসকদলের সাংসদরা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যায় পরিদর্শনে এসে তদারকি করে গেছেন। কাজকর্ম দেখতে দেখতে তাঁর সহাস্য প্রশ্ন, "স্টেজ কেমন হয়েছে? আবার ভেঙ্গে পড়বে না তো?" উত্তরে ডেকোরেটরের দ্বিগুণ সহাস্য উত্তর, "কোন চান্স নেই দিদি, দু হাজার উঠুক আর পাঁচ হাজার উঠুক।" বলার বোধহয় অপেক্ষা রাখে না, মঞ্চ ভেঙ্গে পড়ার প্রশ্ন কার সাম্প্রতিক জনসমাবেশের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর মনে উদয় হয়েছে।
ওদিকে হস্টেলের দাবিতে ছ'জন মেডিক্য়াল পড়ুয়া ১০ দিনের বেশি টানা অনশন করছেন। পরে যোগ দিয়েছেন আরও ন'জন। প্রথম ছ'জন ছাত্রের শারীরিক অবস্থা অত্য়ন্ত সঙ্কটজনক। যে মেডিক্য়াল কলেজে অনশন করছেন পড়ুয়ারা, সেখান থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের দূরত্ব মেরেকেটে দেড় কিলোমিটারও নয়। মাইকের শব্দ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে মেডিক্য়াল কলেজে।
এ নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় উঠেছে প্রশ্ন। দুদিকের দুই ভিন্ন চিত্র নিয়ে একের পর এক পোস্ট চলছে। একদল পড়ুয়া ভদ্রস্থ ছাত্রাবাসের দাবীতে আমরণ অনশন করছেন, তাঁদের চাহিদা আপাতদৃষ্টিতে অতি সামান্য়। ছাত্রদের শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি হলেও সমস্য়া সামাধানের কোন সরকারি চেষ্টা এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি। বরং বৃহস্পতিবার রাতে শয়ে শয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল হাসপাতালে। তাঁদের উপস্থিতির মূল উদ্দেশ্য় নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/07/21st-july-camp-at-Milan-mela-Express-photo-Shashi-Ghosh21st-july-4364-002.jpg)
এদিকে রাত পোহালেই লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিড় জমাবেন ধর্মতলায়। ১৯৯৩ সালে কলকাতার রাজপথে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ ঘেরাও কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। সেদিন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন, জখম হয়েছিলেন আরও অনেকে। তখন যুব কংগ্রেসের রাজ্য় সভানেত্রী ছিলেন মমতা। সেই শহিদ স্মরণের রাশ এখন তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে।
২০১৯ লোকসভা ভোটের অনেক আগেই মমতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করছে দল। তাই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য়, ২০১৯-এর নির্বাচনে আসন সংখ্যা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়া। দীর্ঘদিন ধরেই সভা-সমাবেশে তৃণমূলের শীর্ষ স্থানীয়রা মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবীদার বলে উল্লেখ করে এসেছেন। স্বভাবতই এবারের শহিদ মঞ্চ থেকে রব উঠবে, সারা দেশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে দেখতে চায়। গতবছর শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেই ফেডারেল ফ্রণ্ট গঠনের ডাক দিয়েছিলেন দলনেত্রী। তারপর থেকে সেই মঞ্চ গঠন করার বহু চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তাই এবারের শহিদ দিবসের তাৎপর্য অন্য় বছরগুলোর তুলনায় ঢের বেশি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ইতিমধ্যেই বলেছেন, গতবারের থেকেও এবার লোক অনেক বেশি হবে।
আরও পড়ুন: কেমনভাবে থাকেন মেডিক্যাল কলেজে হবু ডাক্তাররা? এভাবেও থাকা যায়?
দেশের ইতিহাসে একবারই সুযোগ এসেছিল বাঙালীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। নিজের দলের কয়েকজন বাঙালীরই অপচেষ্টায় সেদিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি প্রবীন কমিউনিস্ট জ্য়োতি বসু। আক্ষেপ করেছিল আম বাঙালী। প্রধানমন্ত্রী পদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় এখনও হু-হুতাশ করেন বাংলার মানুষ। অবশ্য় তার আগে ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধির অকস্মাৎ মৃত্য়ুতে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবীদার হিসেবে নাম উঠেছিল আর এক বাঙালী প্রণব মুখোপাধ্য়ায়ের।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/07/21st-july-cover-pic-2-1.jpg)
লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সভায় কী বলবেন মমতা? জাতীয় এবং আঞ্চলিক দলগুলিও সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। বিজেপিকে রুখতে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই কোন পদ্ধতিতে হবে, তা বাতলে দেবেন তিনি। এবারের বক্তব্য়ের সিংহভাগ জুড়েই গেরুয়া বধ প্রক্রিয়ার উল্লেখ থাকবে, তা নিয়েও সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে যে ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমন করেছেন তার জবাবও মিলে যাবে ২১-এর মঞ্চে। রাজ্য়ের ৪২টি লোকসভা আসনের সর্বাধিক আসন জয়ের লক্ষ্য়ে ঝাঁপানোর নির্দেশ দেবেন নেত্রী। কোনওরকম জোট না হলে দলের টার্গেট ৪২ এ ৪২। দিল্লির মসনদে বসতে চাইলে আসন বৃদ্ধি ছাড়া কোনও উপায় নেই, তা ভাল করেই জানেন নেত্রী।
আরও পড়ুন: রাস্তায় আনফিট গাড়ি, পরিবহণ মন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভপ্রকাশ মমতার
এবারে শহিদ দিবস ২৫ বছরে পড়েছে। সদ্য় বিজেপি ছেড়়ে আসা চন্দন মিত্রের মঞ্চে থাকা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ওই তথ্যকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে সিপিএম থেকে যাঁদের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে, তাঁদের এদিনের মঞ্চে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি। বাকি রইলেন দলবদলে আগ্রহী কংগ্রেস সাংসদ এবং বিধায়করা। তাঁরা কী করেন সেটাই এখন দেখার। মোটমাট মঞ্চে কী চমক থাকবে তা দেখার জন্য় অধীর অাগ্রহ রয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল।
ইতিমধ্য়ে উত্তরবঙ্গ এবং রাজ্যের দূরদূরান্ত থেকে তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকরা মহানগরে এসে পৌঁছেছেন। বাইপাসের ধারে মিলনমেলা, কসবার গীতাঞ্জলী স্টেডিয়াম, আলিপুরের কাছে উত্তীর্ণ, এবং ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র-সহ বিভিন্ন অতিথিশালায় তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্য়বস্থা করা হয়েছে। ২১ জুলাই উপলক্ষ্য়ে কড়া নিরাপত্তার ব্য়বস্থা করেছে পুলিশ। যান চলাচল নিয়ন্ত্রনে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কাল সারাদিন প্রায় ছ'হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন। মঞ্চের আশপাশের ছাদ থেকে নজরদারি চলবে। ১৮টি জায়গায় অ্য়াম্বুলেন্স রাখা হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনটি ক্য়ুইক অ্য়াকশন টিমও থাকবে। আটটি জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা যাবে ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠান, তবে ড্রোন মারফৎ কোনও নজরদারি চালানো হবে না।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/07/21_4.jpg)
পরিশেষে, বর্ষা দেবী পাকা ধানে মই দিতে পারেন। আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কাল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ অংশেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে দুই চব্বিশ পরগণা, হাওড়া, হুগলী। কলকাতার কথা আলাদা করে বলা নেই, এই যা রক্ষে, কিন্তু যদি বৃষ্টি হয়, প্রথা মেনেই তৈরি খোলা মঞ্চ এবং খোলা সভাস্থলে কিন্তু ছিটেফোঁটাও আশ্রয়ের সম্ভাবনা নেই।