তিনি একজন মিডিয়া ব্যারন। ওড়িশার বৃহত্তম দৈনিকগুলোর মধ্যে একটি পরিচালনা করেন। সম্পাদক-রাজনীতিবিদ সৌম্যরঞ্জন পট্টনায়েক যিনি মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের ব্যক্তিগত সচিব ভিকে পান্ডিয়ানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, মঙ্গলবার,তাঁকে বিজু জনতা দলের (বিজেডি) সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিজেডি মঙ্গলবার নবীন পট্টনায়েকের স্বাক্ষরিত একটি আদেশ প্রকাশ করেছে। তার মাধ্যমেই প্রাক্তন সাংসদ এবং নয়াগড় জেলার খান্দাপাড়ার বিধায়ক সৌম্যরঞ্জনকে দলীয় পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দলটি তাদের এই সিদ্ধান্তের কোনও কারণ উল্লেখ করেনি। সৌম্যরঞ্জন, তাঁর কাগজের একাধিক কলামে, 'বৈঠকে' যোগদানের জন্য পান্ডিয়ানের হেলিকপ্টার ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পান্ডিয়ানের সফরের ব্যবস্থা করার জন্য সিনিয়র বিজেডি নেতাদের সমালোচনা করে, বিধায়ক আরও জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে গণতন্ত্রে একজন মন্ত্রী না আমলা, কে উঁচু পদে থাকেন? এর আগে পান্ডিয়ানের সম্পর্কে গত মাসে দুটি লেখা সৌম্যরঞ্জন লিখেছিলেন।
* তার মধ্যে ১৮ আগস্ট, তিনি তাঁর কলামে পান্ডিয়ানের জেলা পরিদর্শনকে একটি 'স্পন্সরড প্রোগ্রাম' বলে কটাক্ষ করেছেন। সৌম্যরঞ্জন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যখন জনগণের অভিযোগ শোনার জন্য জেলাগুলোতে কালেক্টরদের নিয়োগ করা হয়েছে, তখন কেন মুখ্যমন্ত্রীর সহকারির এই সফরে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে? বিজেডি নেতাদের কটাক্ষ করে পট্টনায়েক বলেছিলেন যে বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা পান্ডিয়ানের সফরকে সফল করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন এবং বৃষ্টি হলে তাঁরা পান্ডিয়ানের জন্য ছাতার ব্যবস্থাও রাখেন।
* ২৭ আগস্ট: তাঁর কলামে, পান্ডিয়ান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সচিব যশপাল কাপুরের মধ্যে একটি সমান্তরাল তুলনা টেনেছিলেন সৌম্যরঞ্জন। পান্ডিয়ানকে রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে, সৌম্যরঞ্জন বলেছিলেন যে গান্ধীর নির্বাচন এলাহাবাদ হাইকোর্ট দ্বারা অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল, কারণ কাপুর তাঁর হয়ে একটি নির্বাচনী বক্তৃতা করেছিলেন।
বিজেডি বিধায়ক পান্ডিয়ানের সফরের খরচকে চন্দ্রযান-৩ মিশনের খরচের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-৩-এ ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। পান্ডিয়ানের সফরের খরচ প্রায় এই পরিমাণের সমান হবে, যখন তিনি তাঁর জেলা সফর শেষ করবেন। শুধু তাই নয়, অপসারিত বিজেডি নেতা বলেছিলেন যে বিজেডি একবার সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'অহিংস (অহিংসা)' অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছিল। মহিলা সংরক্ষণ বিল পাসের জন্য চাপ দিয়েছিল কিন্তু, মণিপুরে হিংসার সময় নারীরা যখন শোষিত হয়েছেন, তখন নীরব থেকেছে।
দলের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায়, সৌম্য রঞ্জন মঙ্গলবার বলেছেন যে তিনি কিছু হারিয়েছেন বলে মনে করেন না। কারণ, তিনি বা অন্য কোনও বিজেডি নেতার দলে কোনও ভূমিকা ছিল না। মিডিয়া ম্যাগনেট বলেছেন যে তিনি গত সপ্তাহে নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু, অনুরোধটি মঞ্জুর করা হয়নি। বিধায়ক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে তাঁকে বিজেডির সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আদেশনামায় স্বাক্ষরটি নবীন পট্টনায়কের কি না। যদিও বিজেডি নেতারা এখনও এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের সংগঠন সম্পাদক প্রণবপ্রকাশ দাস সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ গোটা বিষয়ে একটি রহস্যময় পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'কৃতজ্ঞতা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। যেখানে কৃতজ্ঞতা নেই, সেখানে ঈশ্বরও সহযোগিতা করেন না।'
আরও পড়ুন- বুধে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক, থাকছে না তৃণমূলের কেউ, তুমুল জল্পনা
সৌম্যরঞ্জন প্রথম নেতা নন, যিনি পান্ডিয়ানের উত্থান নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি করলেন। এর আগে প্রবীণ নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডা, যিনি এখন বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি, দামোদর রাউত ও প্রদীপ পানিগ্রাহিও মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের বিশ্বস্ত সহকারি ভিকে পান্ডিয়ানের সঙ্গে বিবাদের কারণেই বিজেডি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।