লোকসভা ভোটের দু-মাসের মধ্যেই একুশের সমাবেশ। সেই সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে সাজোসাজো রব। বিজেপির ক্রমবর্ধমান দাপটের মধ্যে এদিন তৃণমূলের পক্ষে শহর ভরানোর চ্যালেঞ্জ-ই ছিল আসল। প্রথমটায় একটু ফাঁকা ফাঁকা মনে হলেও বেলা বাড়তেই হাওড়া, শিয়ালদহ কিংবা দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে যতই শহরমুখী গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, ততই অস্বস্তি কেটেছে শাসকদলের কর্তাদের। তবে সার্বিকভাবে এবারের একুশে জুলাই কতদূর সফল, তা এখনও পর্যালোচনা করার সময় আসেনি। তবে তৃণমূলনেত্রীর মেডিকেল-ক্যাম্প ইতিমধ্যেই 'হিট'।
তৃণমূলের এই মেডিকেল ক্যাম্প দিনের শুরুতেই ধর্মতলায় যোগ দিতে আসা তৃণমূল-কর্মী সমর্থকের মন জয় করে নিয়েছে। এসপ্ল্যানেড চত্ত্বরে পিয়ারলেস হোটেলের উল্টো ফুটেই দেখা গেল বড়সড় মেডিকেল ক্যাম্প। সেখানে সার দিয়ে বসে আছেন চিকিৎসকরা। সামনের টেবিলে রাখা ওষুধপত্র বিলি করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এক ঝলকে- একুশের মঞ্চে আক্রমণাত্মক মমতা, কী বললেন?
একুশে জুলাইয়ের জনারণ্য সমাবেশ আগেও দেখেছে শহর। অবরুদ্ধ কলকাতা দেখেছে তৃণমূল নেত্রীর প্রতি আমজনতার নিঃশর্ত সমর্পণ। তবে এমন বড়সড় মেডিকেল ক্যাম্প আগে দেখেনি ধর্মতলা। সাধারণত, স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরে। তবে এবারে তফাত অন্যত্র। সভায় আসা কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে একাধিক চিকিৎসককে দিয়ে চেক-আপ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল এদিন। এই ব্যবস্থায় রীতিমতো সাড়াও দিয়েছেন সমাবেশে আগত কর্মীরা। কিন্তু, ক্যাম্পে স্টেথো গলায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কি সরকারি চিকিৎসক? নৈব নৈব চ! 'পোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনে'র ব্যানারে চিকিৎসকরা এসেছেন সভায় 'স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট' নিয়ে।
শুধু ছোট ছোট ক্যাম্পই নয়, এদিন ধর্মতলায় অস্থায়ী মিনি হাসপাতালও গড়ে তোলা হয়েছে। আর গোটা শহরে টালিগঞ্জ, পার্ক স্ট্রিট, শ্যামবাজারের মতো বিশেষ কিছু স্থানেও সজাগ থেকেছেন চিকিৎসকরা। সমাবেশে যোগ দিতে এমনিতে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই দূরের জেলাগুলি থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা হাজির হয়েছিলেন শহরে। তাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজনে ১৮ তারিখ থেকেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, আলিপুরের উত্তীর্ণ, শিয়ালদহ, গীতাঞ্জলী স্টেডিয়াম কিংবা সল্টলেকে মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। এছাড়াও একুশের দিনে বাড়ানো হয়েছে আরও তিনটি ক্যাম্প।
২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ কেন, কী ঘটেছিল সেদিন?
পোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব তাপস ভট্টাচার্য, বাঁকুড়া থেকে আগত জয়মাল্য ধর কিংবা সিএমআরআই-এর চিকিৎসক পিকে নিমানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খোদ ধর্মতলা চত্ত্বরে এমন সুবিশাল ক্যাম্পে সাড়া মিলছে ভালই। সকাল থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা নিয়ে ছুটে এসেছেন কর্মী-সমর্থকরা। এখানে জ্বর, সর্দি, পৈটিক গোলযোগ কিংবা সানস্ট্রোকের ওষুধ তো ছিলই, পাশাপাশি অক্সিজেন এবং স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। তাপসবাবু হিসেব দিলেন, সকাল ১২টার মধ্যেই দুশো-র বেশি কর্মীরা রীতিমতো উপসর্গ বর্ণনা করে তাঁদের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে গিয়েছেন। তবে সভায় যোগ দিতে আসা দু-জনের অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন হয়েছিল। দু-জনই অজ্ঞান হয়ে যান ধর্মতলা চত্ত্বরে। তাঁদের একজনকে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেওয়া হয়েছে এবং অন্য ব্যক্তিকে 'মিনি হাসপাতালে'র বেডে শুইয়েই চিকিৎসা করছেন ডাক্তাররা।
সবমিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মেডিকেল উদ্যোগ রীতিমতো সাড়া ফেলেছে সমাবেশে।