অবশেষে গ্রেফতার পলাতক বিজেপি নেতা বার্নার্ড মারাক ওরফে রিম্পু। মেঘালয়ের সহ-সভাপতিকে যোগী রাজ্যের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উত্তরপ্রদেশে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন রিম্পু। মেঘালয়ে তাঁর খামারবাড়ির আড়ালে যৌনপল্লি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধে ৭.১৫ মিনিট নাগাদ হাপুর জেলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে মেঘালয় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করে। সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির পুলিশকে রিম্পুর সম্পর্কে অবগত করা হয়। উত্তরপ্রদেশে ওঁর খোঁজ মেলে। পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ সিং জানিয়েছেন, আমরা সূত্র মারফত জানতে পারি, তিনি হাপুরের দিকে যাচ্ছেন। আমরা হাপুর পুলিশকে খবর দিই। তার ৩০ মিনিটের মধ্যে তাঁকে আটক করা হয়। মঙ্গলবারই রিম্পুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মেঘালয়ের আদালত।
গত শনিবার মেঘালয় পুলিশের বিশেষ অভিযান চলে নেতার ফার্মহাউসে। আগে জঙ্গি ছিলেন রিম্পু। বর্তমানে রাজ্য বিজেপির পদাধিকারী। আর তাঁর খামারবাড়ি-ই কি না মধুচক্রের আসর! গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম এক কিশোরীর যৌন হেনস্তার খবর পায় পুলিশ। তার পর অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান। শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে ২৩ জন মহিলা। ৬ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারির ভয়ে পলাতক ছিলেব রিম্পু।
আরও পড়ুন ফার্মহাউসের আড়ালে মধুচক্র! বিজেপির নেতার সম্পত্তিতে পুলিশি হানায় শাসক শিবিরে ফাটল
বর্তমানে গারো আদিবাসী স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য রিম্পু আগে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন গারো ইনসার্জেন্ট গোষ্ঠী অচিক ন্যাশনালিস্ট ভলান্টিয়ার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। পৃথক গারো রাজ্যের জন্য তাঁরা লড়াই করতেন। তার পর অস্ত্র ফেলে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেন। যুক্ত হন বিজেপির সঙ্গে। তাঁর দাবি, এই ফার্মহাউসে কোনও অনৈতিক কাজ হয় না। কিন্তু পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচারের মামলা রুজু করেছে।
৮ ঘণ্টার পুলিশি হানা চলে। প্রচুর মদের বোতল, ৫০০ প্যাকেট অব্যবহৃত কন্ডোম এবং গর্ভনিরোধক বড়ি, ৩৭ হাজার টাকা নগদ, ৩৭টি গাড়ি, ৪৭টি মোবাইল ফোন এবং প্রচুর জাল নথিপত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্য চারটি ছেলে ছিল। একটি বদ্ধ ঘরে তাদের বন্ধ করে রাখা ছিল। উদ্ধারের পর ওরা কথা বলছে পারছিল না। কারণ এতটাই ভয়ে ছিল তারা। অনেক অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে ফার্মহাউসে প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল। অনেকের গায়ে সুতো পর্যন্ত ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, রিম্পুর বিরুদ্ধে অন্তত ২৫টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠী ভেঙে দেওয়ার পরও অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত রিম্পু। তার মধ্যে তুরা মার্কেটে তোলাবাজি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অস্ত্র কারবার, পতিতাপল্লি চালানো, বেআইনি মদ বিক্রি, অবৈধ লটারি টিকিট বিক্রি, জবরদখল, জমি মাফিয়া সবই রয়েছে।
আরও পড়ুন বিজেপি সহ-সভাপতির রিসর্টে মধুচক্র! হানা দিয়ে ৬ শিশু উদ্ধার করল পুলিশ, গ্রেফতার ৭৩ জন
রবিবার একটি ভিডিও বার্তায় রিম্পু বলেছিলেন, তাঁর প্রাণসংশয় রয়েছে। বলেন, “আমি পলাতক নই, বা গ্রেফতারি থেকে পালাচ্ছি। আমি শুধু নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে দূরে রয়েছিষ আর শীঘ্রই সত্যিটা সামনে আনব।” তাঁর দাবি, এই ষড়যন্ত্র করে তাঁর চরিত্র হনন করা হচ্ছে। বিজেপির উত্থানে ভয় পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা এসব করাচ্ছেন।
এদিকে., বিজেপি রিম্পুর পাশে রয়েছে। তারা বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার রিম্পু। তাঁকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কারণ গারো পাহাড়ে তাঁর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি আর্নেস্ট মাওরি বলেছেন, “তাঁর ফার্মহাউসে সম্মানীয় মানুষজন, পরিবার থাকতে আসে। সেটাকে পতিতালয় বলা বরদাস্ত করা হবে না। এই রিসর্ট তিন বছর ধরে চলছে। এতদিন কোনও অভিযোগ ওঠেনি কেন!” এই প্রসঙ্গে শাসকদল এনপিপি নীরব। আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই শাসকশিবিরে ফাটল ধরেছে।