রাজ্য সরকারের তরফে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়ে গিয়েছেন রাজ্য়ের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল রায়। তাতে মন গলেনি বিজেপির। বুধবার মহাজাতি সদনে ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর স্মরণসভা। এই সভাতে না আসার জন্য তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসকে তুলোধোনা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা। তবে তাঁর এই সমালোচনাকে আমল দিলেন না অন্য কোনও বিজেপি নেতা। তাঁদের বক্তব্যে ওই সমালোচনার কোনও সমর্থন মিলল না। স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্মরণ সভায় রাজ্য নেতৃত্ব এক মঞ্চে থাকলেও গোষ্ঠীকলহের ছাপ কি রয়েই গেল! অন্য দিকে এদিন বোমা ফাটালেন তৃণমূল কংগ্রেসের একসময়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায়। বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেই দিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী ও তাঁর বন্ধু লালকৃষ্ণ আদবানী না থাকলে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মই হত না।
পূ্র্ব ঘোষণামত বাজপেয়ীর স্মরণসভায় এলেন না তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি। ইন্দ্রনীল রায় ছিলেন রাজ্যের প্রতিনিধি। এই নিয়ে সভাতেই সুর চড়ালেন রাহুল সিনহা। তিনি প্রশ্ন তুললেন সৌজন্য নিয়ে। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাহুল বলেন, এই স্মরণসভায় এলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত। এখানে শাসকদল যেদিকে যায়, অন্য বিরোধীরাও সেদিকে যায়। এদিনের ঘটনায় সরকারি দলকে অনুসরণ করল বাকিরা, এমনটাই অভিযোগ রাহুলের। এটা অন্য কোথাও দেখা যায় না। যা অত্যন্ত নিন্দাজনক কাজ। তবে তিনি প্রস্তাব দেন, কলকাতায় অটলজির একটা বড় মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হোক। সেই অনুষ্ঠানে সবাই হাজির থাকুন। নাম না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টিপ্পনী কাটতে ছাড়েননি। বললেন, অটলজি এখানে কারও বাড়ি গিয়ে মাথা নত করেছিলেন।
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের এসব নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। তিনি অন্য দলের ভূমিকা নিয়ে একটি কথাও বললেন না। বরং তিনি জানিয়ে দিলেন, রাজ্য সরকার এদিনের প্রেক্ষাগৃহ ভাড়ার কোনও শুল্ক নেয়নি। পরে তিনি জানালেন, রাজ্য সরকারে তরফে একজন মন্ত্রী এসেছিলেন। তবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা কেন আসেননি, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি দিলীপবাবু। রাজ্যের মন্ত্রী এলেও বিজেপির একাংশ সৌজন্য মনে করেননি। কিন্তু রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এভাবে প্রাক্তন এক প্রধানমন্ত্রীর স্মরণসভায় রাজ্যের মন্ত্রী পাঠিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ভবিষ্যতে অনেকরকম ভাবেই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে দল।
এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতিতে বিধায়ক কেনা-বেচার চর্চা অধিকতর। কেন্দ্র বা রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেই থাকে। এদিন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, এক ভোটের ব্যবধানে আস্থা ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজেপয়ী। সারা দেশ অবাক হয়েছিল। কাউকে ধমকও দেননি। আবার অর্থের বিনিময়ে ওই এক ভোট ক্রয় করেননি। কারন তিনি অর্থের বিনিময়ে রাজনীতি করা অপছন্দ করতেন। ভারতের ওপর কোনওরকম আঁচ এলে কঠোর তিনি হতেন। কার্গিল যুদ্ধ ও পোখরান বিস্ফোরণের সময় তার প্রমান দিয়েছেন। তিনি দেশের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা। এদিনের সভায় অনেকেই নরেন্দ্র মোদিকে অটলজির যোগ্য উত্তরসূরী বলে দাবি করেছেন। স্মরণ সভায় ছিলেন মেঘালয়ের রাজ্য়পাল তথাগত রায়, দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।