খাদ্য তালিকায় রয়েছে কোনও দিন ভাত, ডাল ও সয়াবিনের তরকারি, আবার কোনও দিন ভাত, ডাল ও ডিমের তরকারি। কখনও আবার আলু-পোস্ত, পাঁপড় ভাজা, আলুমাখা। কিন্তু স্কুলের মিড ডে মিলে ছাত্রছাত্রীদের জুটছে কখনও নুন-ভাত অথবা ফ্যান-ভাত। সোমবার এমন মেনু 'হাতে-নাতে ধরে ফেললেন' হুগলীর বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। মিড ডে মিল-এর এহেন করুণ বাস্তবতার কথা স্বীকার করলেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষিকারা এবং তা মেনে নিলেন স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিও। ঘটনাস্থল হুগলীর চুঁচূড়া বালিকা বাণীমন্দির স্কুল। এই ঘটনা নিয়েই সরগরম সপ্তাহের প্রথম দিনের রাজ্য রাজনীতি।
সোমবার চুঁচূড়া বালিকা বাণীমন্দির স্কুলে হঠাৎ পরিদর্শনে যান হুগলীর সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায়। তখন স্কুলের ছাত্রীরা মিড ডে মিলের খাবার খাচ্ছিলেন। লকেট চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, "স্কুলের মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসে। তাই কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ পরিদর্শনে এসেছি। এই স্কুলে মিড ডে মিল-এ দেওয়া হচ্ছে নুন-ভাত। আজও শুধু ভাত দেওয়া হয়েছে। শুকনো ভাত খাচ্ছে বাচ্চাগুলো। দিনের পর দিন মিড ডে মিল নিয়ে এখানে দুর্নীতি ও চুরি চলছে।"
লকেটের অভিযোগ, "হিসেবে দেখানো হয়েছে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ৫ হাজার ডিম কেনা হয়েছে। আর সেখানে কি না নুন ভাত দেওয়া হচ্ছে! তাহলে ডিম কোথায় যাচ্ছে? ২৫৭ কেজি চালের বস্তার কোনও হিসেব নেই। চালের বস্তা কার বাড়়িতে যাচ্ছে? কারা জড়িত আছেন? তাঁদের মুখ ফাঁস করতে হবে।"
জানা যাচ্ছে, হুগলির এই স্কুলে দীর্ঘ দিন স্থায়ী কোনও 'টিচার ইন চার্জ' নেই। কে অস্থায়ী 'টিচার ইন চার্জ' হবে তা নিয়েও স্কুলের শিক্ষিকাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। স্কুলের শিক্ষিকাদের একাংশের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিকা যাকে অস্থায়ী 'টিচার ইন চার্জ' করতে চেয়েছিলেন তাঁকে মানেননি স্কুলের পরিচালন সিমিতির সভাপতি গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি যাঁকে 'টিচার ইন চার্জ' করেছেন তাঁকে আবার মানেননি শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই সমস্যা মিড ডে মিলে প্রভাব ফেলে। শিক্ষিকা ও পরিচালন সমিতির লড়াইয়ের মাঝে পড়ে ছাত্রীদের কপালে জুটছে কেবল নুন-ভাত। তাহলে ডিম ও সবজির টাকা কোথায় যাচ্ছে? সব মিলিয়ে মিড ডে মিলের পুষ্টিতত্ত্ব তো বিশ বাঁও জলেই, বরং প্রশ্ন উঠছে আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে।
চুঁচূড়া পুরসভার চেয়ারম্যান তথা ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি গৌরীকান্ত মুখার্জি স্কুলের অচলাবস্থার জন্য কয়েক জন শিক্ষিকাকেই দায়ী করেছেন। তাঁর বক্তব্য, "টিচার ইন চার্জ বেশ কিছুদিন আগে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছেন। অন্য এক শিক্ষিকাকে ইনচার্জ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক জন শিক্ষিকা তাঁকে মানছেন না। তাঁরা জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং জেলাশাসককে অভিযোগ করেছেন। স্কুলের ডি আই ওই টিচার ইন চার্জের সিগনেচার অথরিটি কেড়ে নিয়েছেন। যার জন্য ওই স্কুলে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে।"
তবে মিড ডে মিলের সমস্যার কথা মেনে নিলেও দুর্নীতির কথা স্বীকার করেননি গৌরীকান্তবাবু। পাশাপাশি তিনি সাংসদকে কটাক্ষ করে জানান, "এই রাজ্যে না দেখে উনি বরং উত্তরপ্রদেশের স্কুলগুলি পরিদর্শন করুন, দেখুন ওখানে কী হচ্ছে? একমাত্র স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব"।