এবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়ালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়া সফরে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসকে দুষে তৃণমূলনেত্রীর তোপ, 'কংগ্রেসের জন্যই মোদী শক্তিশালী হচ্ছেন।' একইসঙ্গে দিন কয়েক আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের রাহুল গান্ধীকে বিঁধে করা মন্তব্য নিয়েও মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, 'প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।'
তিন দিনের গোয়া সফরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকালই গোয়ায় বড়সড় চমক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে জোড়াফুলে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী নাফিসা আলি, টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ ও পরিবেশপ্রেমী মৃণালিনী দেশপ্রভু। গোয়াবাসীর আস্থা জিততে স্থানীয় এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের দলে টানার কৌশল তৃণমূলের। একুশের ভোটের বিপুল সাফল্য তৃণমূলকে সর্বভারতীয়স্তরে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। বাংলার সীমা ছাড়িয়ে তাই একের পর এক রাজ্যে সংগঠন সাজানোর চেষ্টা জোড়াফুলের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসকে সরিয়ে এবার দেশে বিজেপি-বিরোধী প্রধান দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে মরিয়া তৃণমূল। এর আগে ঠারেঠোরে কংগ্রেসকে বিঁধলেও এবার তাই অলআউট আক্রমণে তৃণমূল। বিজেপির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে কংগ্রেসকে বিঁধে এদিন তৃণমূলনেত্রী বলেন, “কংগ্রেসের জন্যই মোদী শক্তিশালী হচ্ছেন। বিজেপি-কংগ্রেস সমঝোতা করে। আমরা চাই না ভোট ভাগাভাগি হোক।”
দিন কয়েক আগে প্রশান্ত কিশোর বলেছিলেন, “ভারতের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে বিজেপি আরও কয়েক দশক থাকবে। ওরা জিতুক বা হারুক। কংগ্রেসের যেমন প্রথম ৪০ বছরে বিজেপি কোথাও ছিল না। ৩০ শতাংশের বেশি ভোট একবার দখলে চলে এলে সেটা এত তাড়াতাড়ি যাবে না। তাই কখনও এই ভুল করবেন না যে মানুষ ভীষণ রেগে রয়েছে আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কুর্সি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। যদিও মোদীকে ছুঁড়ে ফেলে, বিজেপি কিন্তু কোথাও চলে যাচ্ছে না। ওরা থাকবে, আর আরও কয়েক দশক লড়াই করবে। এত তাড়াতাড়ি যাবে না বিজেপি।”
পিকে-র সেই মন্তব্য নিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বেশ জলঘোলা হয়েছে। বিশেষ করে কংগ্রেস নেতৃত্ব ভোটকুশলী পিকে-র রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তবে পিকে-র হয়ে ঢাল ধরেছেন তৃণমূলনেত্রী। এব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় সেই কংগ্রেস। তাঁর কথায়, “প্রশান্ত কিশোরের মন্তব্যের ঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে না। কংগ্রেসের মতো একা নয়, সকলকে নিয়েই লড়তে হবে। তবেই বিজেপিকে হারানো যাবে। এটাই বলতে চেয়েছেন প্রশান্ত কিশোর।”
আরও পড়ুন- মমতার নিশানায় কংগ্রেস, তৃণমূলের নজরে লোকসভার প্রধান বিরোধী দলের তকমা?
গোয়ায় দলের প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়াবাসীর মন পেতে এদিন বাংলার সঙ্গে সমুদ্র-রাজ্যের মিল টেনেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন,“গোয়ার সঙ্গে বাংলার অনেক মিল। গোয়ার শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার মিল আছে।” তবে শুধু গোয়া, অসম, ত্রিপুরা নয়। এবার উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানাতেও সংগঠন সাজাতে চায় তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন এপ্রসঙ্গে বলেন, “যেখানেই সুযোগ আছে, আমরা সেখানেই যাচ্ছি। বিজেপির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হতে হবে। দিল্লির দাদাগিরি চলবে না।”
আগামী বছরেই গোয়ায় বিধানসভা ভোট। তার আগে দলের সংগঠন সাজানোর সঙ্গেই তৃণমূলনেত্রীর কথায় মিলেছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। গোয়ায় ক্ষমতা এলে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে জোর দেবে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা গোয়া নিয়ে খুবই সচেতন। গোয়ায় মৎস্যজীবী, ট্যাক্সিচালকরা সমস্যায় আছেন। গোয়ায় সেভাবে কর্মসসংস্থান হচ্ছে না। এই বিষয়যগুলিকেই গুরুত্ব দিতে চাই।”
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন