সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে দেশ। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ক্রমশ বৃহৎ হচ্ছে। জনতার অসন্তোষ আঁচ করতে পেরে বেঁকে বসেছে শরিক দল। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা অস্বস্তিতে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। চাপের মুখে তাই এনআরসি নিয়ে সুর নরম করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। অবিলম্বে দেশজুড়ে এনআরসি লাগুর কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই বলে জানাচ্ছেন তারা।
এনআরসি হলে চরম বিপদের আশঙ্কা করছেন দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানরা। বিরোধী শিবির বলছে ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি এনআরসি বিজেপির দেশভাগের চক্রান্ত। বিরোধী প্রচারের জবাবে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের মন্ত্রী মুক্তার আব্বাস নাকভির জবাব, 'দেশজুড়ে এনআরসি লাগুর কোনও পরিকল্পনাই হয়নি। সরকারি কোনও স্তরেও এনআরসি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা এগোয়নি। এনআরসি কেবল আসামে হয়েছে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই তাকে নিয়ে নানা রটনা রটার মত বিষয় হচ্ছে।' বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের কথায়, 'সম্পূর্ণ বিষয়টিই এখনও পরিকল্পনাস্তরে রয়েছে। এখনই এনআরসি নিয়ে কথা বলার মতো কিছু নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন এনআরসি সংক্রান্ত প্রস্তাবটিতে ২০২১ সালের আগে কার্যকর হবে না। আমাদের কাছেও এনআরসি নিয়ে কোনও বিস্তারিত তথ্য নেই।'
কিন্তু, গত বৃহস্পতিবারই তো দলের কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছিলেন, 'দেশজুড়ে এনআরসি লাগু হবে'। এপ্রসঙ্গে রাম মাধব বলেন, 'এই ঘোষণা বিজেপি সভাপতি করেছেন। তবে এখনও তা বছর দুয়েক দেরি রয়েছে। তাই চটজলদির কিছু নেই।' বিজেপি সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করেছেন যে, আপাতত বিজেপির মূল লক্ষ্য সিএএ-কে লাঘু করা।
আরও পড়ুন: চাপে চুপ? এনআরসি প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ বিজেপি-মোদী সরকারের
শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীর কথায় পরিষ্কার যে, সিএএ নিয়ে আক্রমণাত্মক হলেও চাপের মুখে এনআরসি নিয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছে বিজেপি ও মোদী সরকার। এনআরসিকে পাশে সরিয়ে আপাতত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের গুরুত্ব বোঝাতে মাঠে নেমেছেন মোদী-শাহরা। নয়া আইন নিয়ে আপসে রাজি নয় গেরুয়া বাহিনী। উল্টে, নাগরিকত্ব আইনকে পুঁজি করেই ভোটবাক্সে ডিভিডেন্ট পেতে মরিয়া পদ্ম শিবির।
ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের হঠাতে দেশে এনআরসি লাগু হবে বলে ভোটের প্রচারে অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল বিজেপির। দলের সবাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিরবার জানিয়েছেন এনআরসি লাগু হবেই। সিএএ সম্পূর্ণ হলেই কাজ শুরু হবে এনআরসির। সংসদে দাঁড়িয়েও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা জানিয়েছেন শাহ। তবে, এনআরসি নিয়ে আপাতত সেই চড়া সুর নেই বিজেপির কোনও নেতা, মন্ত্রীর গলায়। নাকভি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'কাদের জন্য এনআরসি হবে? কেবল মুসলমানদের জন্য? না, এটা হবে প্রত্যেকটি ভারতবাসীর জন্যই। এতে লুকোছাপা বা কোনও সম্প্রদায়ের মানুষের ভয়ের কিছু নেই। সরকার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াতেই সব কাজ করবে। তবে, সরকারিস্তরে এই নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। তাই বিস্তারিত কোনও তথ্যও নেই।'
সিএএ ও এনআরসির প্রতিবাদে আসমুদ্র হিমাচল প্রবল বিক্ষোভ, রক্তক্ষয়ী আন্দোলন চলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েজনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি নিয়ে প্রকাশ্যে তৎপরতা জাহিরে রাজি নয় বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকার। এনআরসি নিয়ে প্রচার করে মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, বাংলা সহ দেশের বাকি উপনির্বাচনগুলিতে ফল ভাল হয়নি দলের। আসামে বিক্ষোভ শুরু হতেই এনআরসি নিয়ে অবস্থান বদল করেছে এনডিএ শরিক অগপ। নীতীশ কুমার জানিয়েছেন বিহারে এনআরসি লাগু করবেন না। বেসুর আরেক এনডিএ শরিক বিহারের দল এলজেপির। আর এতেই বেকায়দায় গেরুযা শিবির। আপাতত তাই এনআরসি প্রসঙ্গে ধীরে চলো নীতি নিয়েই রাজনীতির জল মাপতে চাইছে বিজেপি ও মোদী সরকার।
Read the full story in English