করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অভিযোগ করেছেন, যথেষ্ট ভ্যাকসিনের জোগান দিতে পারছে না কেন্দ্র। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারকে বিরোধীদের সেই সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ভার্চুয়াল প্রচারে তিনি অভিযোগ করলেন, বিরোধীরা স্রেফ গুজব রটিয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী, যথেষ্ট ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র।
করোনার ছোবল যখন দেশজুড়ে তীব্র, সেই সময় দেশবাসী কিছু ছবি এবং ভিডিও দেখে শিউড়ে উঠেছিল। কখনও দেখা গিয়েছে, করোনায় মৃত্যুর পর দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার দেখা গিয়েছে পরিবারের অজান্তে দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেকটা আবর্জনার মতোই। এই ধরনের ঘটনা যত বেড়েছে, ততই সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যথেষ্ট ভ্যাকসিন নেই। সেই কারণেই করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, যে রাজ্যগুলোর ঘটনা নিয়ে ওই সব ছবি এবং ভিডিও তৈরি হয়েছে, সেসব আবার বিজেপিশাসিত। মানে, মোদী সরকারের ভাষায় ডবল ইঞ্জিন সরকারের অধীনে থাকা রাজ্য। পরবর্তীতে করোনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোকে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্যাকসিন দিয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, কেন্দ্রের শাসক দলের গায়ে লেগে যাওয়া কালো দাগ মুছে যায়নি।
এর পাশাপাশি, বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলোর লাগাতার করে যাওয়া অভিযোগ তো আছেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং বিভিন্ন অবিজেপিশাসিত রাজ্যের শাসক দলগুলো ভ্যাকসিন বঞ্চনার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোকে বেশি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। পাশাপাশি, বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পেতে জুতোর শুকতলা খয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা।
অভিযোগ উঠেছে, আগেভাগে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। এই সব অভিযোগের প্রভাব পড়েছে সমাজের সর্বস্তরে। আসন্ন বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সেই সব অভিযোগ বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না বিজেপি। আর, সেটা বুঝেই নির্বাচনী প্রচারে ভ্যাকসিন প্রসঙ্গ তুলে আনলেন মোদী। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
তবে, শুধু ভ্যাকসিনই না। মোদীর ভার্চুয়াল প্রচারে উঠে এল বাজেট এবং কৃষির প্রসঙ্গও। বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি নিয়ে একগুচ্ছ ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। যে সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, তার বেশিরভাগেরই মূল জীবিকা কৃষি। সেকথা মাথায় রেখে বাজেটে কৃষি নিয়ে বড় ঘোষণা করেছেন বিরোধীরা। তবে তাঁরা, কৃষি নিয়ে মোদী সরকারকে বিশেষ কৃতিত্ব দিতে নারাজ। বাজেটের ঘোষণায় কৃষকদের তেমন একটা লাভ হবে না-বলেও বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন- হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াইসির নিরাপত্তায় বড়সড় রদবদল কেন্দ্রের
এই পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল প্রচারে মোদী দাবি করলেন, এবারের বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ আগের তুলনায় ছ'গুণ বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, হাজারো বিতর্ককে জিইয়ে রেখেই বিতর্কিত কৃষি আইন আগেই প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র। বিতর্কিত কৃষি আইনগুলো দেশজুড়ে যে বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা। এবারের বাজেটে কৃষিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেশজুড়ে কৃষকদের সেই ক্ষোভ সামাল দেওয়ার লক্ষ্যেই। সেই অভিযোগও করেছেন বিরোধীরা।
তবে, বিরোধীদের অভিযোগে কর্ণপাত করার চেয়ে তিনি যে কেন্দ্রের অবস্থান তুলে ধরার ওপরই বেশি জোর দিতে চান, ভার্চুয়াল প্রচারে তেমনটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মোদী। একইসঙ্গে দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ বিরোধীদের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর সেই কারণে সাধারণ নাগরিকদের ধন্যবাদও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রকৃত কান্ডারি।
Read story in English