বিজেপিতে যোগ দেওয়ার একসপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বীরভূমের লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। মুকুল রায়ের কাছে ইস্তফা দানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। মুকুল রায় জানিয়েছেন, তিনি এ প্রসঙ্গে দলে আলোচনা করবেন।
প্রসঙ্গত ২৯ মে (বুধবার) তৃণমূল ছেড়ে মুকুল রায়ের হাত ধরে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন মনিরুল ইসলাম। কিন্তু মনিরুলের পদ্ম শিবিরে যোগদানে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় দলের অন্দরে এবং বাইরে। মনিরুলের মতো 'তৃনমূলী সন্ত্রাসের মুখ"কে দলে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিজেপির বহু নেতা। এ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতেও জোর চর্চা শুরু হয়। বিজেপি যদি 'তৃণমূলী সন্ত্রাসের মুখ'কেই দলে নেয় তাহলে এ রাজ্যে কী করে তারা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে তা নিয় প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। জানা যাচ্ছে তাঁকে নিয়ে এই বিতর্কের কারণেই ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মনিরুল।
আরও পড়ুন- বিজেপিতে বিধায়ক মণিরুল, অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, “আমি ওঁকে ভালবাসি”
বঙ্গ রাজনীতিতে চেনা নাম মনিরুল ইসলাম। তবে সাংবাদ মাধ্যমে অধিকাংশ সময়েই তাঁর মুখ দেখা গিয়েছে লাল বৃত্তের অন্দরে। ফরোয়ার্ড ব্লক কর্মী হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও রাজ্যে পালা বদলের কালে সময় বুঝে তৃণমূলে নাম লেখায় মনিরুল। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে পরপর দু'বার লাভপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। এরপর উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ব্যাপক হাওয়া দেখে সম্প্রতি জার্সি বদল করে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন মনিরুল। এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “কোনও কিছু বিবেচনা না করেই যেভাবে দলে নেওয়া হচ্ছে তা মোটেই ঠিক না। যোগদানকারীর অতীত বিচার না করেই এমন অন্তর্ভুক্তি বিজেপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, ‘তৃণমূলী সন্ত্রাসের মুখ’রাই যদি বিজেপিতে ঠাঁই পায়, তাহলে কীভাবে এ রাজ্যে তারা নির্ভরযোগ্য বিকল্প হবে? এভাবে আর চলতে পারে না। একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে”। এছাড়া, এতকাল বিজেপি নেতা-কর্মীরা তৃনমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-অন্যায়ের প্রশ্নে সোচ্চার হয়েছিলেন, এখন তারাই দল বদল করায় ক্ষুব্ধ হচ্ছেন পুরাতনী বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
আরও পড়ুন- মুকুলের থাবা রুখতে ১৭ পুরসভায় ভোট চায় মমতা সরকার
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে দল বদল ঘিরে সরগরম বাংলার রাজনীতি। প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন সাবেক ঘাসফুল নেতারা। এই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। কিন্তু এই ধরনের জার্সি বদলের মাধ্যমে দলের কলেবর বৃদ্ধিতে রাশ টানতে চাইছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বিষয়ে আপাতত ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করতে চাইছে মোদী-শাহর দল। শীর্ষ নেতৃত্বের এই মনোভাবের কথা ইতিমধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রামলাল জানিয়ে দিয়েছেন মুরলীধর সেন লেনের নেতাদের।
সূত্রের খবর, বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রামলাল রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলায় যে বিজেপিকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো দক্ষ নেতার অভাব বোধ হচ্ছে। দলে যুবল প্রতিনিধিত্বের অভাব নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। এদিকে এই ‘দল বদলের মূল কারিগর’ মুকুল রায়ের দিল্লির ১৮১ নং সাউথ এভেন্যুর বাড়িতে এখনও শতাধিক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসতে চাওয়া মুখেদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। কিন্তু বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব তো এই প্রবণতায় রাশ টানতে চাইছে, তাহলে কী করবেন মুকুল রায়? একদা তৃণমূলের ‘চাণক্য’ মুকুলের সাফ জবাব, “বাংলার মানুষ তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে ক্ষুদ্ধ এবং বিরক্ত। ওখানকার নেতারা প্রায়শই আমায় ফোন করে বলছেন যে তাঁরা দলে থাকতে চান না। তাছাড়া, আপনি যাদের দলে নিচ্ছেন তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। তাহলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না”।