মমতা করে ফেলেছেন। ইচ্ছা প্রকাশ করে রেখেছেন রাজ্যের প্রাক্তন সিপিআই (এম) মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য এবং রাজ্য যুব কংগ্রেস। এবার মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসতে চায় মুকুল রায়ের নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপি। রাজ্যে গণতন্ত্র বাঁচাতে মেট্রো চ্যানেলে তিন দিনের জন্য ধর্না করতে চায় বিজেপি। এই মর্মে ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে গেরুয়া শিবির।
সারদা কাণ্ডে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই-এর হঠাৎ হানা ও কেন্দ্রীয় স্বশাসিত সংস্থা দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিবাদে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছিলেন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে অ-বিজেপি দলগুলিকে এককাট্টা করার উদ্যোগ মমতা নিয়েছেন। এবার সেই মমতা সরকারের হাতেই গণতন্ত্র বিপন্ন বলে ধর্নায় বসতে চাইছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুন নিয়ে মুখ খুললেন মুকুল রায়
বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা এ রাজ্যে লোকসভার নির্বাচনী দলের মুখ্য পদাধিকারী মুকুল রায় বলেন, "ফেব্রুয়ারির ২১, ২২ ও ২৩ তারিখ মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসতে চাই। আমরা অঙ্গীকার করছি ওই তিন দিন আমরা ওখানে কোন মাইক্রোফোন ব্যবহার করব না। কলকাতা পুলিশ ও কর্পোরেশন এর কাছে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। যদিও আমরা জানি, অন্য সভাগুলোর মতো এই ধর্নার জন্যও আমাদের অনুমতি মিলবে না। কারণ এখানে কোন গণতন্ত্র নেই।"
উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত শহরে তথা রাজ্যে নানারকম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও। এই সময়ের মধ্যে কোনো বড় মাপের রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ না করার প্রথাই পালন করা হয়েছে এতদিন। এর দুটি প্রধান কারণ হলো মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা, এবং রাস্তা অবরোধের অনুমতি না পাওয়া।
মমতা প্রশাসন অনুমতি না দিলে?
বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু প্রশ্ন তোলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসতে পারেন, তাহলে আমরা কেন অনুমতি পাব না? যদি আমাদের অনুমতি না দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আদালতের দ্বারস্থ হব। আদালতের অনুমতি মিললে সেখানে টানা তিনদিনের ধর্নায় বসব। রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য।"
আরও পড়ুন: রোজ ভ্যালির অনশনকারিদের ‘খুঁজে পেল’ বিজেপি
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় এই মেট্রো চ্যানেল থেকেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছিলেন। কেন্দ্রের দ্বারা গণতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ায় 'দেশকে বাঁচাতে' এবারও তিনি ওই মেট্রো চ্যানেলেই তিন দিনের ধর্নায় বসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় হাজির হয়েছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, এসেছিলেন আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তেজস্বী যাদব। ধর্না চলাকালীন মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী শিবিরের একাধিক হেভি ওয়েট। পরবর্তীতে ঠিক হয়েছে, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে সম্মিলিতভাবে ধর্নায় বসবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, তৃণমূল নেত্রীর ধর্নার পরই শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যও মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, শিলিগুড়ি পুরসভা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নীতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুর পরই ধর্নার কথা বলেছে কংগ্রেস। যে দুদিন মমতার দিল্লিতে ধর্নায় বসার কথা রয়েছে, সেই সময় কলকাতায় ধর্নায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছে যুব কংগ্রেস। চিট ফান্ড কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি ও আমানতকারীদের টাকা ফেরতের দাবিতে ওই ধর্না করতে চান আবদুল মান্নানরা।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর নামে এফআইআরের পরই গভীর রাতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে গেল ‘অদ্ভুত গাড়ি’!
ভোট আসতেই কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র মেট্রো চ্যানেল হঠাৎ রাজনীতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রথমে তৃণমূলের ধর্না, এরপর সিপিএমের আগ্রহ এবং মাঝে কংগ্রেসের ঘোষণা। এসবের পর এবার বিজেপিও চাইছে কলকাতার মেট্রো চ্যানেলে ধর্না করতে। মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসলে অনেকটা বেশি রাজনৈতিক প্রচার পাওয়া যাবে, তাই এমন পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।