কেন্দ্রীয় বিজেপি ২০২১ বিধনাসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে বাংলার দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে ভার্চুয়াল জনসভা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২৪ জুন থেকে জোন ভিত্তিক ৫টি ভার্চুয়াল জনসভা করবে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করতেই নানা কর্মসূচি নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। এই অবস্থায় নানা ইস্যুতে দলের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এর পিছনে কোনও সুপ্ত রাজনীতি থাকলেও তা যদি নীতিগত বিষয়ে মতানৈক্য হয় তাহলে প্রতিপক্ষের কাছে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে।
সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "যাঁরা কাপুরুষ তাঁরা ক্ষমার কথা বলে। হিংসা ছাড়া পৃথিবীতে কোনও দিন সমাধান হয়নি।" মোদ্দা কথা হিংসার সমাধান হিংসায়, মত দিলীপের। এর প্রেক্ষিতে বিজেপির জাতীয় কর্ম সিমিতির সদস্য মুকুল রায় বলেন, "ভারতীয় জনতা পার্টি হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।" অর্থাৎ বিজেপির এই দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্য একেবারে বিপরীতধর্মী। তবে শুধু হিংসার ক্ষেত্রই নয়, অন্যান্য অনেক বিষয়েই তাঁরা একে অপরের ভিন্ন মত পোষণ করছেন। মুকুল রায় যখন বলছেন, "করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য যথাযথ কাজ করেছে।" তখন প্রথম থেকেই দিলীপ ঘোষ করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের বিরুদ্ধে বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ করে আসছেন। তবে কি প্রতিপক্ষের সঙ্গে মূল লড়াইয়ের আগেই দলের অভ্যন্তরে নানা বিরোধ ক্রমশ প্রকাশ্যে চলে আসছে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজ্য-রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন- বঙ্গ বিজেপিতে তীব্র অসন্তোষ, তৃণমূল-সিপিএমত্যাগীরা কেন বড় পদে?
রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা চমক-ধমকের কথা বলে আসছেন আরএসএস ঘনিষ্ঠ দিলীপ ঘোষ। তারপর বিধায়ক হয়েছেন, সাংসদ হয়েছেন মেদিনীপুর থেকে। একথাও অনস্বীকার্য যে তাঁর মেয়াদকালেই এরাজ্যে সব থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। দুজন সাংসদ থেকে ১৮ সাংসদ হয়েছে। যদিও সাফল্যের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবু অনেকের চেষ্টা সত্বেও হাসতে হাসতে ফের দলের রাজ্য সভাপতি হয়েছেন। কোনও কিছু বাধা হতে পারেনি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এখন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হতে চাওয়া বিজেপির রাজ্য সভাপতি আর রাজনীতিতে পা রাখা সেদিনের আরএসএস প্রচারকের চিত্রপট সম্পূর্ণ ভিন্ন । তখন তাঁর পরিচিতির দরকার ছিল তাই প্রচার পেতে বেলাগাম মন্তব্য করে যা মনে হয়েছে বলেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। তবু কেন তিনি এমন হুঙ্কার ছাড়ছেন? অভিজ্ঞ মহলের মতে, ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করতে গেলে দলের যুব শক্তিকে উজ্জীবিত করে রাখতে হবে। মূলত তাঁদের চাঙ্গা করাই তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য। তাছাড়া এসব বললে সবসময় প্রচারেও থাকা যায়।
কিন্তু দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্বের দুরকম ভিন্ন মত রাজনৈতিক মহলের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এই রাজ্যের কোনও জেলার নাম নেই তা নিয়েও মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের বক্তব্যে বিস্তর অমিল। এমনকী ২০২১ বিধানসভার নির্বাচন নিয়েও একেবারে ভিন্ন মত পোষণ করছেন বঙ্গ বিজেপির দুই শীর্ষ নেতৃত্ব। দিলীপ ঘোষ, সায়ন্তন বসুরা বলছেন, ২০২১ নির্বাচন শুধু জয়ের অপেক্ষা। অন্য দিকে মুকুল রায়ের বক্তব্য, "২০২১ বিধানসভা নির্বাচন কঠিন লড়াই।" এটা কি শুধুই রাজনৈতিক কৌশল নাকি চরম মতবিরোধ? চরমপন্থী-নরমপন্থী রাজনীতির মেলবন্ধন? নানা প্রশ্ন উঁকি মারছে রাজ্য-রাজনীতিতে। বাংলার রাজনীতিতে যাঁর অধুনা পরিচিতি 'চানক্য' নামে তিনি কি শুধু শুধুই রক্ষণাত্মক মন্তব্য পেশ করে যাচ্ছেন? উত্তর দেবে আগামী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন