কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না মুখ্যমন্ত্রী, এই মুহূর্তে একটা ইস্যুতেই স্নায়ুর চাপে জেরবার ৬ মুরলীধর সেন লেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলে রাজ্য়ের রাশ অনেকটাই আলগা হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ, মন্ত্রীমশাইকে ব্য়স্ত থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক নিয়ে। ফলে আগামী দিনে রাজ্য়ে প্রধান দায়িত্ব (পড়ুন, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি) পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যেতে পারে। তাই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না হলে মুখ্য়মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশী। রাজ্য় বিজেপির দুই প্রধান নেতার ঘনিষ্ঠ বলয়ে এখন এসব হিসাব নিকেশ নিয়েই গুঞ্জন চরমে। জয়ী সাংসদদের নিয়ে যখন এই দুই শীর্ষ নেতাই দিল্লিতে, তখন রাজ্য়ের পরবর্তী মুখ্য়মন্ত্রী কে হবেন সেই জল্পনাতেই মশগুল বিজেপি সদর দফতর।
লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য়ে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারিগর কে, এ প্রসঙ্গে জোরালো বিতর্ক জারি রয়েছে পদ্ম পার্টির অন্দরে। অনেকেই এক্ষেত্রে নায়ক মনে করেন তৃণমূল থেকে আসা মুকুল রায়কে। অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষের বক্তব্য়, দল ভাল করেছে এটাই যথেষ্ট। তবে, দিলীপ ঘোষ যাই বলুক, দলের একটা বড় অংশের মতে 'চাণক্য' মুকুলই কিস্তিমাত করেছেন। কিন্তু, এই মুকুলকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই চিটফান্ড অতীতের কথা তুলে নাক সিঁটকেছিলেন। আর এখানেই উঠে আসছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আসাম মডেলের কথা।
আরও পড়ুন- ভোটের পর সবথেকে বড় ধাক্কা মমতার? শুভ্রাংশু-সহ রাজ্যের তিন পুরসভা রাতারাতি বিজেপিতে!
অসম মডেল কী?
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অসমের কংগ্রেস নেতা হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে দলে নিয়েছিল। এই হিমন্ত বিশ্বশর্মার চিটফান্ড যোগ যেমন ছিল, তেমনই রাজ্য রাজনীতির পাটীগণিতও ছিল নখদর্পণে। হিমন্তের হাতযশেই রাজ্য় বিধানসভা নির্বাচনে তাক লাগানো ফলাফল করে বিজেপি। এরপরই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদ পান তিনি। হিমন্তের কাজে তাঁর প্রতি বিজেপি নেতৃত্বের ভরসা এতটাই বাড়ে যে অসমের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য়গুলিতে পদ্ম ফোটানোর দায়িত্বও বর্তায় তাঁর কাঁধে। মনে করা হচ্ছে, অসম জয়ের পর বাংলাতেও ওই মডেলই অনুসরণ করছে মোদী-শাহ জুটি। এ রাজ্য়েও তৃণমূল থেকে দলে নেওয়া হয়েছে চিটফান্ডে অভিযুক্ত মুকুল রায়কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা 'দক্ষিণ হস্ত' মুকুলের ওপরই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এরপর প্রথমে পঞ্চায়েতে শত সমস্যার মধ্যেও রুপোলি রেখা দেখা যায় গেরুয়া মার্কশিটে, আর তারপর তো ৪২-এ ১৮টি আসন জয়ের মেগা সাফল্য। ফলে একাংশ মনে করে, মুকুলে ভরসা রেখে ফল পেয়েছে পদ্ম শিবির, এ কথা অনস্বীকার্য।
আরও পড়ুন- তৃণমূল বিধানসভায় বিরোধী দলের তকমাও পাবে না: মুকুল রায়
তবে রাজ্য বিজেপি যে শুধুই মুকুলময় তা না। অন্য পক্ষের মতে, রাজ্য সভাপতির পদে আরএসএস-এর বলিষ্ঠ কার্যকর্তা দিলীপ ঘোষ আসার পরই দলের সংগঠন মজবুত হয়েছে। ময়দানে থেকে লড়াই করতে জানেন দিলীপ। আরএসএস থেকে রাজনীতিতে যোগ দিয়েই খড়্গপুর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আর এবার মেদিনীপুর থেকে সাংসদও নির্বাচিত হলেন তিনি। এছাড়া তাঁর ওপর ইতিমধ্য়ে বার দশেক হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তবু দমেননি তিনি। ফলে মূল স্রোতের রাজনীতিতে দিলীপ অল্প সময়েই সাংগঠনিক ও সংসদীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। তাই দিলীপ পক্ষের দাবি, রাজ্যে বিজেপির বিস্তারের পিছনে 'দাদা'র ভূমিকাই প্রধান। আর এই দুই নেতার নিঃশব্দ আকচাআকচিতে ক্রমশ পিছনে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য রাজ্য় নেতারা।
আরও পড়ুন- গেরুয়াঝড়ের হাওয়াতেই কি কাজলকে কাছে টানলেন অনুব্রত?
৩০ মে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার শপথে রাজ্য থেকে কে কে শপথ নেবেন, সে বিষয়ে এই মুহূর্তে ৬ মুরলীধর সেন লেনে যত না আলোচনা চলছে, তার থেকে অনেক বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ভবিষ্য়তে রাজ্যে প্রধানকে কে হবেন তা নিয়ে। রাজ্য বিজেপিতে এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন, দল ক্ষমতায় এলে বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী কে হবেন? বলা যায়, এই আলোচনাতেই সরগরম রাজ্য বিজেপি দফতর। তাঁরা মনে করছেন, এ রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পতন এখন শুধুই সময়ের অপক্ষো। আর তাই এক পক্ষ চাইছে অন্য় পক্ষের নেতা এখনই কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়ে যাক। তাহলে রাজ্যের কুর্সিতে তাঁদের 'দাদা'র পথ প্রশস্ত হবে। রাজ্য বিজেপিতে জোর গুঞ্জন, মুখমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আপাতত সমান সম্ভবনা রয়েছে মুকুল-দিলীপ উভয়ের। তবে শেষ মুহূর্তে তৃতীয় ব্যক্তিকে সামনে এনে যে চমক দেওয়া হবে না, সে কথাও কেউ বাজি ধরে বলতে পারছেন না। কারণ, দলটার নাম বিজেপ। মোদী-শাহ ছাড়া এ মুহূর্তে আর কেউ শেষ কথা বলতে পারেন না এই দলে।