কৃষ্ণনগরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি হুঙ্কার ছেড়েছিলেন মুকুল রায়ের পদ খারিজ করেই ছাড়বেন। সেই আইনি লড়াইয়ের মধ্যে দলনেতার হুংকারকে কোনও তোয়াক্কা না করেই ফের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক তন্ময় ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন। রাজ্য বিজেপির অন্দরে ঝড় যে অব্যাহত তা ৬, মুরলি ধর সেন লেনে কান পাতলেই শোনা যাবে।
গত বিধানসভার অধিবেশনে কয়েকজন বিজেপি বিধায়ককে দেখা গিয়েছে তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে বেশ হাসিঠাট্টা করে খাস গল্প করতে। সবটাই সৌজন্যের রাজনীতি ভাবলে তা আদৌ কতটা ঠিক না ভুল তা ভবিষ্যৎ বলবে। তৃণমূল বিধায়কদের মুখে এমন কথাও ভেসে বেরিয়েছে ও (কোনও বিজেপি বিধায়ক) আবার দল ছাড়লো কবে! উত্তর ২৪ পরগনার বিজেপি বিধায়কদের একটা অংশ দলীয় সভা-সমাবেশে অনেক ক্ষেত্রেই গরহাজির থাকছেন। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তৃণমূল এসে বিজেপির বিধায়ক ভাঙন আরও উসকে দিল বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে অভিযান শুরু করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু ২ মে ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় ৭৭ আসনেই আটকে গিয়েছে বিজেপির টার্গেট। তারপর দলে নানা বিশৃঙ্খলা প্রকাশ্যে আসে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে প্রকাশ্যে ভিডিও বার্তা দিয়ে তুলোধোনা করেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। পরে যদিও তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিজেপির দলাদলি প্রমানিত হয়ে যায় প্রকাশ্যেই। মুকুল রায় দল ছাড়তেই একটা লবি নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ যে এখনও বিদ্যমান তা বিষ্ণুরপুরের বিধায়ক দল ছেড়ে প্রমান করে দিলেন।
আরও পড়ুন- ফের বিজেপিতে ভাঙন, মুকুলের পর আরও এক গেরুয়া বিধায়ক তৃণমূলে
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা অধিকাংশ নেতৃত্ব ভোটের ফলের পর পুরনো দলে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। এই নিয়ে ঝড় উঠেছিল পদ্মশবিরের অন্দরে। এই নেতাদের নানাভাবে কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। সূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী দলনেতা হলেও দলের অভ্যন্তরে কোন্দল মেটেনি। তাঁর ঘন ঘন দিল্লিতে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও বিজেপিতে কম কানাঘুষো হয়নি। কোনও বিধায়ক দল ছাড়লে তাঁর পদ খারিজ করেই ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই হুংকারবানীর পরও বিষ্ণুপুরের বিজেপি বিধায়ক দলের নীতির প্রতি বিষোদ্গার করে ঘাসফুল শিবিরে সামিল হলেন।
বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, যাঁরা যাওয়ার তাঁরা যাবেন। জোর করে তো আটকানো যাবে না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে আরও অনেক বিজেপি বিধায়ক ও নেতৃত্ব তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন। এদিকে দল ছাড়লেও এখনও বিধায়ক রয়ে গিয়েছেন প্রবীণ নেতা মুকুল রায়। তিনিই কি অন্য বিজেপি বিধায়কদের দলত্যাগের অনুপ্রেরণা কীনা তা নিয়েই চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন