সারদা-রোজভ্যালি নয়, বাংলায় আরও এক বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আনলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে বাংলার উপভোক্তাদের থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা লুঠ করেছে মমতা সরকার, এমন বিস্ফোরক অভিযোগই করেছেন মুকুল রায়। রাজ্য সরকারের মদতেই বাংলায় বিদ্যুতের মাশুল লাগামছাড়া ভাবে বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। রাজ্য সরকার ও সিইএসসি মিলে টাকা লুঠ করেছে বলে অভিযোগ একদা মমতা সেনাপতির। মমতাকে নিশানা করে মুকুলের খোঁচা, ‘‘এই লুঠের টাকা কে নিল? শুধুমাত্র সিইএসসি নাকি শাসকদলের কাছে গেল? নাকি কোনও ব্যক্তিবিশেষের কাছে গেল? এর তদন্ত করা হোক’’।
ঠিক কী অভিযোগ মুকুল রায়ের?
সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলেন, ‘‘দেশের অন্য রাজ্যে বিদ্যুতের মাশুলের যে হার সে তুলনায় বাংলায় অনেক বেশি। বাংলায় বিদ্যুতের মাশুল সবচেয়ে বেশি, ইউনিট পিছু প্রায় ৭ টাকা। বাংলায় জনদরদী সরকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী, তিনি মানুষের কথা ভাবেন, আর সেই রাজ্যে বিদ্যুতের দাম ভারতে সবচেয়ে বেশি’’। এরপরই মুকুল বলেন, ‘‘বিদ্যুতের মাশুল রেগুলটরি অথিরিটি নির্ধারণ করে। ২০১০ সালে ওরা বিদ্যুতের দাম ঠিক করে দেয়। কিন্তু তৎকালীন রাজ্য সরকার (বাম সরকার) তা গ্রহণ করেনি। ২০১১ সালে মমতা সরকারে আসেন। ২০১১-১২ সালে বাড়ল ৩১ %, ২০১২-১৩ সালে বাড়ল ৪%, ২০১৪-১৫ সালে বাড়ল ১৭.৩৩%। এই দাম বৃদ্ধির ফলে ৩২ লক্ষ উপভোক্তার পকেট থেকে মোট ১৩ হাজার কোটি টাকা বেরোল। এই টাকা লুঠ করল রাজ্য সরকার ও সিইএসসি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে যদি রাজ্য সরকার সম্মতি না হত, তাহলে দাম বাড়ত না। তাহলে এই লুঠের টাকা কোথায় গেল? শুধু কি সিইএসসি নিল? নাকি রাজ্য সরকারের কাছে গেল? নাকি কোনও ব্যক্তি বিশেষের কাছে গেল? এই ব্যক্তিবিশেষ কে? আমরা এর তদন্ত চাই’’। এই ব্যক্তিবিশেষ বলতে মুকুল ঠিক কাকে বোঝাতে চাইছেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও, বিজেপি নেতার ইঙ্গিত যে তাঁরই একসময়ের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে, তেমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। অন্যদিকে, সিইএসসি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা মমতা ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলেই পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক সফরে প্রায়শয়ই দেখা যায় সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে। ফলে, মমতার পাশাপাশি গোয়েঙ্কার দিকেও মুকুল অভিযোগের আঙুল তাক করলেন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আরও পড়ুন: মমতার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে: মুকুল রায়
মমতা সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই রেগুলটরি কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে মুকুল আরও বলেন, ‘‘২০১৮ সালে রাজ্যে রেগুলটরি অথিরিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আর কে সিনহা। তিনি সিইএসসি-র কাছে ১০ বছরের হিসেব জানতে চেয়েছিলেন। একমাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। এর জেরে রাজ্য সরকার নির্দেশে ওই রেগুলটরি অথিরিটিকে অকেজো করে দেয়। এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা চলবে না বলে জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকার’’।
বিদ্যুত কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে মুকুল রায় বলেন,‘‘কার স্বার্থে এমনমটা হল, সে নিয়ে তদন্ত করা হোক’’। পাশাপাশি বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে অন্য রাজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুতের দাম কমানো হবে বলে এদিন প্রতিশ্রুতি দেন মুকুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিয়ে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আরও বলেন, ‘‘একদিন সারদা, রোজভ্যালি, প্রয়াগ, এমপিএস আর্থিক কেলেঙ্কারি দেখেছেন, কিন্তু এতবড় কেলেঙ্কারি সামনে আসেনি আগে। এই টাকা চুরি হল কেন? রাজ্য সরকারের সম্মতিতে এই টাকা চুরি হয়েছে। ১৩ হাজার কোটি টাকা চুরির জবাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে হবে’’।