Advertisment

'গদ্দার' থেকে 'কৃষ্ণ', মুকুল-অর্জুনের সমঝোতা প্রকাশ্যে

যখন এই দুজন তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন তখন সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে মুকুল রায়কে সিবিআই তলব করার পর থেকেই সম্পর্ক সমঝোতার জায়গায় পৌঁছায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lok Sabha elections 2019: লক্ষ্য ৪২-এ ২৩, কিন্তু কোথায় প্রার্থী তালিকা?

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে মুকুল রায়।

গদ্দার থেকে কৃষ্ণ। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিং বলেই ফেললেন, "মুকুল রায় আগেও আমার নেতা ছিলেন, একসঙ্গে কাজ করেছি।" ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দাপুটে তৃণমূল বিধায়ক এখন বিজেপিতে। মুকুল রায়-অর্জুন সিং সমীকরণ কতদিনের? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। নাকি স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতা?

Advertisment

৪ জুন ২০১৪। ওই দিন সিঁথির মোড়ে ভাটপাড়ার বিধায়কের গাড়ি দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করা হয়েছিল। সেই তল্লাশির পর তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। প্রায় কয়েকশো অর্জুন সমর্থক মোটরবাইকে এসে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল সিঁথি এলাকায়। অভিযোগ জমা পড়েছিল বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছে। সেদিন কী অভিযোগ ছিল পুলিশের? গাড়িতে ছিলেন অর্জুন সিং। সেই গাড়িতে অভিযুক্ত মনীশ শুক্লাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন অর্জুন, সেটাই ছিল অভিযোগ। কিন্তু দোর্দন্ডপ্রতাপ বিধায়কের গাড়ি তাড়া করে আসামী ধরার চেষ্টা! সেদিনের ঘটনার পিছনে কে ছিলেন, তা খুঁজতে গিয়ে তৃণমূলের অন্যতম এক শীর্ষ নেতার নাম ছড়িয়েছিল অর্জুন সিংয়ের ঘনিষ্ঠ মহল। যদিও লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে।

সিঁথির মোড়ের ঘটনার পর তৃণমূলের শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। সেই ঘটনার রেশ ছিল দীর্ঘ দিন। শিল্পাঞ্চলের 'কৃষ্ণ-অর্জুনের' সম্পর্ক সবমসয় মধুর ছিল, এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই। তৃণমূল সূত্রে খবর, যখন এই দুজন তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন তখন সম্পর্ক ছিল একেবারে সাপে-নেউলে। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে মুকুল রায়কে সিবিআই তলব করার পর থেকেই তাঁদের সম্পর্ক সমঝোতার জায়গায় পৌঁছায়।

জানা গিয়েছে, নতুন দল গড়ার চেয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়াই শ্রেয় বলে সিদ্ধান্ত নেন মুকুল রায়। তিনি জানতেন, গেরুয়া শিবিরে তাঁর ওজন বাড়াতে হলে তৃণমূল ভাঙাতেই হবে। স্বভাবতই রাজনীতিতে চির শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই। শ্রীকৃষ্ণের নজর পড়েছিল শিল্পাঞ্চলের দাপুটে নেতা অর্জুনের ওপর। রাজনীতিক চর্চা বলে, ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে দলে ফেরেন মুকুল রায়, তখনও কিন্তু অর্জুনের সঙ্গে ভাল সম্পর্কই ছিল।

তৃণমূল রাজনীতিতে সাধারন ধারনা ছিল, মুকুল ও অর্জুনের মধ্যে দূরত্ব বিপুল। সূত্রের খবর, নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে অর্জুন বরাবরই বলতেন, "মুকুলদা অনেক বড় নেতা। রাজনীতির প্যাঁচও ভাল বোঝেন।" সূত্রের খবর, মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কিন্তু ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দুজন একে অপরের সম্পর্কে এমন সব মন্তব্য করতেন যাতে মনে হয় তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। এটাই ছিল কৃষ্ণ ও অর্জুনের 'পলিটিক্যাল ট্যাকটিকস'। এভাবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন দুজন।

মন্ত্রিত্ব না জুটলেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সাংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করবে তৃণমূল, এটাই ছিল অর্জুনের শেষ আশা। কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার আগেই তিনি জেনে যান, তাঁকে প্রার্থী করছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটে প্রার্থী ঘোষণার সময় ক্ষোভ-অভিমান-রাগ ঝরে পড়ছিল বিধায়কের চোখে-মুখে। তারপর কথামত সোজা দিল্লিতে।

এর আগে প্রকাশ্য সমাবেশে মুকুল রায়কে গদ্দার বলতেও ছাড়েন নি অর্জুন। কারণ, তাঁকে গদ্দার বিশেষণ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই গদ্দার আজ অর্জুনের শ্রীকৃষ্ণ। এমনকী কাঁচরাপাড়া-হালিশহরে সভা করে গালমন্দ করতেও ছাড়েন নি একসময়। সূত্রের খবর, গত এক বছরে একাধিকবার তাঁরা বৈঠক করেছেন অত্যন্ত গোপনে। কিন্তু তা স্বীকার করা তো দূরের কথা, একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করতেন।

অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, লোকদেখানো এই খেলা চলেছে দীর্ঘ দিন ধরেই। অবশেষে দিল্লিতে গিয়ে হাতে-হাত মেলালেন কৃষ্ণ-অর্জুন। কালীঘাটের বিমর্ষ মুখে হাসি ফুটলো দিল্লিতে মুকুলের দৌলতে। এতদিনের গোপন খেলা প্রকাশ্যে এল। তবে এখানেই খেলা শেষ এমন নয়, যবনিকা পড়ে নি এই নাটকে।

tmc bjp mukul roy
Advertisment