রাজ্যপাল পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে জগদীপ ধনকড়ের বিরোধ প্রকাশ্য এসেছে একাধিকবার। যাদবপুরকাণ্ডের পর মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের অভিযোগকে কেন্দ্র করেই এবার নয়া বিতর্ক রাজ্য-রাজনীতিতে। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলায় স্কুল শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী এবং পাঁচ বছরের ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় শোক প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেন, " রাজ্যের জন্য এটি উদ্বেগজনক একটি ঘটনা এবং এটি বর্তমান রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরই একটি প্রতিফলন’’। অন্যদিকে, আরএসএসের তরফে বলা হয়েছে, মৃত শিক্ষক তাঁদের অনুগামী ছিলেন, সেই কারণেই এই হত্যা।
আরও পড়ুন- জিয়াগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার শূন্য, পথে গেরুয়া শিবির
তবে রাজ্যপালের এই মন্তব্যর পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের সাংবিধানিক সর্বোচ্চ পদে থেকে রাজ্যপালের এই মন্তব্য অনুচিত। তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, তৃণমূল কর্মী খুনে রাজ্যপাল কিংবা রাজভবনের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া না হলেও বিজেপি কর্মী খুনে কেন সরব হলেন রাজ্যপাল? যদিও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি রাজভবনের পক্ষ থেকে। মুর্শিদাবাদের এই খুনের ঘটনা নিয়ে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেন, "মুর্শিদাবাদ জেলায় এক স্কুল শিক্ষক, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের অমানবিক,বর্বরোচিত হত্যায় আমি হতবাক, দুঃখিত এবং ভারাক্রান্ত! রাজ্যজুড়ে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি চলছে এটি তারই প্রতিচ্ছবি"।
ইতিমধ্যেই জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় রাজ্য সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এমনকি সঠিক আইনের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং স্বচ্ছ তদন্তেরও দাবি জানান রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "যাঁরা এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ তাঁরা যেন স্বচ্ছ তদন্ত চালিয়ে যান। এরকম পরিস্থিতিতে সঠিক ভাবে তদন্ত করে যাওয়া খুবই কঠিন। তবে আমাদের উচিত রাজ্যের আইন শৃঙ্খলাকে বজায় রেখে কাজ করে যাওয়া।"
আরও পড়ুন- অষ্টমীতে প্রথম দেখা, চার ঘণ্টা পর বিয়ে!
এদিকে, রাজ্যপালের এই মন্তব্যের পরই রাজভবনের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, "মুর্শিদাবাদের এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড মানবতাকে লজ্জিত করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তরফে কোনও রকম সাড়া পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি অসহিষ্ণুতা এবং রাজ্যের উদ্বেগজনক আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতিরই প্রতিফলন"। বিবৃতিতে এও বলা হয়, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই ডেপুটি জেনারেল অফ পুলিশ এবং রাজ্যের মুখ্য সচিবকে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
তবে রাজ্যপালের মন্তব্যের পরই পাল্টা নিশানা করে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্যপাল নিজেই তাঁর সাংবিধানিক সীমা অতিক্রম করে তাঁর পদটিকে অবমাননা করছেন"। জিয়াগঞ্জে খুনের ঘটনায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরেই হয়েছে বলে দাবি করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সত্যকে আড়াল করতে রাজ্যপালকে ব্যবহার করছে গেরুয়া বাহিনী।
Read the full story in English