সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে তাদের প্রতিনিধিদের বৈঠক নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মুসলিম সমাজ। কিছু সংগঠন এই বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে। কারও কাছে এটা সময়ের প্রয়োজন। আবার কারও মতে এই বৈঠক ভেলকিবাজি ছাড়া আর কিছুই না।
গত মাসে, মুসলিম সম্প্রদায়ের পাঁচ জন বিশিষ্ট সদস্য- প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং, আরএলডি সহ-সভাপতি শাহিদ সিদ্দিকি, প্রাক্তন এএমইউ ভাইস চ্যান্সেলর এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জমিরউদ্দিন শাহ এবং শিল্পপতি সইদ শেরওয়ানির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আরএসএস প্রধান সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
বৈঠকে উভয়পক্ষ একে অপরের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। আর, পর্যায়ক্রমে এই ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তেজনা প্রশমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর গত সপ্তাহে, ভাগবত একটি মসজিদে অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশন (এআইআইও)-এর প্রধান ইমাম উমর ইলিয়াসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ইলিয়াসি, সেই বৈঠকের পরে ভাগবতকে 'রাষ্ট্রপিতা' বলে উল্লেখ করেছিলেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, এই ধরনের আলোচনা, 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি' তৈরি করবে।
এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের (এআইএমপিএলবি) কার্যনির্বাহী সদস্য কাসিম রসুল ইলিয়াস। তিনি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে ভাগবত এবং আরএসএস যদি সত্যিই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছতে চায়, তবে তাদের মুসলিমদের প্রকৃত প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। অর্থাৎ যে সব সংগঠনের মুসলিমদের মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে, সেই সব সংগঠনের সঙ্গে আরএসএস বা ভাগবতকে যোগাযোগ করতে হবে। কাসিম রসুর ইলিয়াসের মতে, সেই সব সংগঠন হল AIMPLB বা জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ অথবা জামায়াত-ই-ইসলামি। ইলিয়াস বলেন, 'ভাগবত আমাদের বা এই সব সংগঠনের কোনওটির সঙ্গেই গত ২০ বছর ধরে অন্তত যোগাযোগ করেননি।'
আরও পড়ুন- দলিত ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, অগ্নিগর্ভ আউরাইয়া, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরাল বিক্ষোভকারীরা
কাসিম রসুল ইলিয়াস, আরএসএসের সঙ্গে মুসলিম প্রতিনিধিদের বৈঠকে উত্থাপিত বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে তাঁরা এই বৈঠকে খুশি। কিন্তু, ঘটনা হল যে গত আট বছরে (মোদী সরকারের) ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তৃতা, মুসলিম গণহত্যার জন্য খোলামেলা আহ্বান, মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের হুমকি, সেইসাথে হিজাব-সহ নানা ইস্যুতে বিতর্ক বেড়েছে। জ্ঞানবাপীর মত মসজিদ দখলের চেষ্টা বেড়েছে।'
কাসিম রসুল ইলিয়াসের অভিযোগ, 'ভাগবত এই বিষয়গুলো নিয়ে কখনও বিবৃতি দেননি। এমনকী যেখানে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার নেই, সেখানেও এই ধরনের ঘটনা বেড়েছে। আরএসএসই তো বিজেপির পরামর্শদাতা। তাহলে আরএসএস কেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার নির্দেশ দেয়নি? সরকারকে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়নি? তাই এই ধরনের শুভেচ্ছা বৈঠকগুলোর কোনও গুরুত্ব নেই। এসব আসলে আরএসএসের প্রচারের অংশ।'
Read full story in English