সংসদ ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিলের বিরোধিতা করছে মুসলিম সংগঠনগুলো। তাদের নেতারা বলেছেন যে বিলে মুসলমানদের জন্য কোটা থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একসুরে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বা ওবিসি কোটারও দাবি তুলছে মুসলিম সংগঠনগুলো। একইসঙ্গে মুসলিম সংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, এই সংরক্ষণের মাধ্যমে মুসলিম মহিলাদের সঙ্গে বঞ্চনার সুযোগ তৈরি করেছে মোদী সরকার। আর, এই সব কারণেই সংসদে আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। বুধবার লোকসভার বিতর্কের সময় ওয়াইসি অভিযোগ করেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী সরকার, মুসলিম মহিলাদের বঞ্চনা করেছেন।
ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের (আইইউএমএল) রাজ্যসভার সাংসদ পিভি আবদুল ওয়াহাব বলেছেন যে বিলটি সম্পর্কে তার দলের কিছু আপত্তি আছে। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মুসলিমরা ওবিসির অংশ। তাই তাঁরা ওবিসিদের জন্য কোনও সংরক্ষণ না-হওয়ায় উদ্বিগ্ন। যদিও সাম্প্রতিক অতীতে কোনও জাতিশুমারি হয়নি। তবে, মুসলিম নেতারা নিশ্চিত যে মুসলিমরা এবং হিন্দু ওবিসি মিলিয়ে তাঁরা ভারতের জনসংখ্যার অন্তত ৫০। ওবিসি প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে, ওয়াহাব ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে ঐতিহাসিক কারণে অভিজাত মহিলারা আরও বেশি সুযোগ পাবেন। ওবিসিদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রবেশাধিকার কম। উদাহরণস্বরূপ, কেরলের পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫১% সংরক্ষণ রয়েছে। সেখানে কিন্তু, ওবিসি আর মুসলিমদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ নেই। তবে, মুসলিম মহিলারাও জনপ্রতিনিধি হন।'
রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে, মোদী সরকারের 'নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম বিল' রাজ্যসভাতেও পাস হয়েছে বৃহস্পতিবার। বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ২১৪টি। বিপক্ষে একটাও পড়েনি। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) এখনও বিলের ব্যাপারে বিবৃতি দেয়নি। এআইএমপিএলবি মুখপাত্র এবং কার্যনির্বাহী সদস্য এসকিউ আর ইলিয়াস অবশ্য বলেছেন, 'নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিষয়গুলো বোর্ডের উদ্বেগের মধ্যে পড়ে না।'
তবে ইলিয়াসের দল ওয়েলফেয়ার পার্টিও বর্তমান বিলটিকে সমর্থন করেনি। এই ব্যাপারে ইলিয়াস কার্যত ঘুরিয়ে বলেছেন, 'আমরা কীভাবে একটি বিল পাসের বিরুদ্ধে হতে পারি, যা প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করে? অবশ্যই, এটা স্বাগত। তবে, বিলটি বাস্তবায়িত হবে কি না, আমাদের দেখতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে সংরক্ষণ ৩৩ শতাংশ নয়, ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। আমরা চাই সংরক্ষণ অবিলম্বে কার্যকর করা হোক। যাতে তা ২০২৪ সালের নির্বাচনে কার্যকর হতে পারে। কেন অপেক্ষা করছে?'
জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ, দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন। তারা মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেনি। সংগঠনের সম্পাদক নিয়াজ আহমেদ ফারুকি বলেছেন, 'আমাদের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নেই। তবে, আমরা মহিলা সংরক্ষণ বিলকে পুরোপুরি সমর্থন করি। আপনি নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে তর্ক করতে পারবেন না। এই পদক্ষেপকে খুব স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু, সব নারী সমান নয় বা একই সুবিধা ভোগ করেন না। আমরা মনে করি, সরকারের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।'
আরও পড়ুন- বিধুরির ‘কুমন্তব্য’: এবার পালটা চাপের খেলায় বিজেপি, স্পিকারের কাছে কী আবেদন?
ফারুকি বিলের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই বিল এবং আইন0 'বৈষম্যের হাতিয়ার' হওয়া উচিত নয়। ফারুকি আরও বলেন, 'আমাদের আরেকটি সমস্যা হল সীমানা নির্ধারণ। এটি কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা রয়েছে, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ। অতীতে এই জাতীয় নির্বাচনী এলাকাগুলোকে বিভক্ত করে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংরক্ষিত নির্বাচনী এলাকা করা হয়েছিল। এইভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।'