২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বর্ধমানে রাজবাড়ির পাশে বিসি রোডে ছোট্ট একটা মঞ্চে সভা করতে এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতা সমীর রায়কে (২০২০-তে প্রয়াত) সিপিএম বেধরক মারধর করেছিল বলে অভিযোগ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি জখম সমীর রায়কে দেখতে বর্ধমানে এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেদিন লালদুর্গে ভিড় দেখে মমতার বুঝতে অসুবিধা হয়নি ২০১১ তে পরিবর্তনের প্রবল হাওয়া চলছে। জিটি রোডে উপচে পড়েছিল মানুষের ঢল। এদিন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার রোড শো বর্ধমানবাসীকে সেই মমতার রোড শোয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেদিনও একই রাস্তায় রোড শো ছিল। সময়টাও ছিল বিকেল থেকে সন্ধ্যা।
উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলে বিজেপির সংগঠন অনেকটাই মজবুত। লোকসভার ফল দেখলে তা অনেকটাই স্পষ্ট। পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে সংগঠনের খোলনলচে বদলে দলকে চাঙ্গা করতে সক্রিয় হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করে উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গল মহলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তারা ভাল ফল করবে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে লোকসভায় কিছু আসন জুটলেও জোরালো সংগঠন ছিল না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দক্ষিণবঙ্গে দলকে চাঙ্গা করতে ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ফেলে। দক্ষিণ ২৪ পরগণায় জেপি নাড্ডা যাওয়ার পর এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফের ওই জেলায় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। দক্ষিণ বঙ্গের জেলা ধরে ধরে কর্মসূচি নিচ্ছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল মানেই চাল চোর, কাটমানির সরকার’, তোপ নাড্ডার
১৯ ডিসেম্বর পূর্ব মেদিনীপুরের অমিত শাহর সভায় শুভেন্দু অধিকারীসহ একঝাঁক তৃণমূল বিধায়ক ও নেতৃত্ব গেরুয়া ঝান্ডা হাতে তুলে নেয়। তার আগে তিনি উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গল মহল ঝালিয়ে নিয়ে এসেছেন। বর্ধমানে জেপি নাড্ডা রোড শো করলেন, চলতি মাসের শেষে হাওড়ায় সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন একই জেলার দুই পৃথক কর্মসূচিতে ভিড় দেখে স্বস্তি দেখা যায় দলীয় নেতৃত্বের মুখে।
মমতার রোড শোয়ের ১০ বছর পর বিজেপি সভাপতির রোড শো। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় তখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন রোড শোয়ের আয়োজক। আর এদিনের আয়োজক রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। তুলনা, আলোচনা চলেই আসে। বর্ধমান শহরে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সেদিন শাসক বিরোধী তৃণমূলের র্যালির জমায়েত চমকে দিয়েছিল লালদুর্গের বামনেতাদের। এদিন বিরোধী দলের রোড শোয়ের ভিড়কে অভিজ্ঞ মহল গুরুত্ব দিচ্ছে। শনিবার বীরহাটা থেকে কার্জনগেট রোড শোয়ের দূরত্ব মেরেকেটে ১ কিলোমিটারের সামান্য বেশি হতে পারে। এই পথ সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছে ১ঘণ্টা ৩০ মিনিট। রাজনৈতিক মহলের মতে, সাংগঠনিক কৌশলে কিভাবে অন্যদের সঙ্গে লড়তে হয় তা বিলক্ষণ জানে গেরুয়া শিবির।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন