Advertisment

অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নাইডু গ্রেফতার! দূরত্ব রাখছে বিজেপি, কোনও লাভ হবে জগনমোহনের?

চন্দ্রবাবুর ছেলে নারা লোকেশ বর্তমানে রাজ্যজুড়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে রয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Chandrababu Naidu

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু শনিবার, ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর, মার্কাপুরম নির্বাচনী এলাকার তাদিভারিপল্লি গ্রামে। নাইডুকে ৩৭১ কোটি টাকার দক্ষতা উন্নয়ন কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। (পিটিআই ছবি)

একযোগে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনের এখনও কয়েক মাস বাকি। রাজ্য পুলিশের হাতে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) সভাপতি এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর নাটকীয়ভাবে গ্রেফতারে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগনমোহন রেড্ডির নেতৃত্বাধীন শাসক দল ওয়াইএসআরসিপির খুব বেশি লাভ না-ও হতে পারে। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য দক্ষতা উন্নয়ন কর্পোরেশনের সঙ্গে জড়িত বহু কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে নাইডুকে শনিবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁকে নান্দিয়ালে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং দুর্নীতিদমন ব্যুরো আদালতে হাজির করার জন্য তাঁকে বিজয়ওয়াড়ায় নিয়ে যায়। নাইডুর গ্রেফতারে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন টিডিপি সমর্থকরা। তাঁরা প্রতিবাদ করার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।

Advertisment

ঘটনায় রাজ্য পুলিশ সমস্ত প্রবীণ টিডিপি নেতাকে গৃহবন্দি করেছে। তাই তাঁরা কোনও প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না। টিডিপি নাইডুর 'অবৈধ' গ্রেফতারে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। এই গ্রেফতারকে 'রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে টিডিপি অভিযোগ করেছে। বিজয়ওয়াড়ার টিডিপি সাংসদ কেসিনেনি শ্রীনিবাস এই ব্যাপারে চিঠিও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন তাঁর ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে থাকাকালীন নাইডুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরের বছর এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন। সেখানে টিডিপি সুপ্রিমোর প্রতি জনগণের সহানুভূতি বেশিদিন স্থায়ী না-ও হতে পারে।

২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ওয়াইএসআরসিপি অন্ধ্রের মোট ১৭৫টি আসনের মধ্যে ১৫১টিতে জয়লাভ করেছে। টিডিপি আসনসংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২৩-টিতে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর, নাইডু কুরনুলে একটি আবেগপূর্ণ আবেদনে বলেছিলেন যে জনগণ তাঁকে ক্ষমতায় না-বসালে ২০২৪ সালের নির্বাচনই হবে তাঁর শেষ ভোট। তিনি বলেছিলেন, 'আপনারা কি আমাকে আশীর্বাদ করবেন? আমাকে যদি রাজনীতি চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে দলকে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে হবে। আমাকে যদি রাজনীতিতে থাকতে হয়, বিধানসভায় যেতে হয়, অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়, তবে আপনাকে ২০২৪ সালে টিডিপিকে নির্বাচনে জেতাতে হবে। আপনি যদি পরের নির্বাচনে আমাদের জয় নিশ্চিত না-করেন, তাহলে এটাই আমার শেষ নির্বাচন হতে পারে।'

২০২১ সালের নভেম্বরে, নাইডু বিধানসভায় ভেঙে পড়েছিলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তাঁর দলের ক্ষমতায় ফিরে না-আসা পর্যন্ত তিনি সভায় প্রবেশ করবেন না, এমনকী তিনি জগনের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী ভুবনেশ্বরীকে মৌখিকভাবে গালিগালাজ করা এবং তাঁর ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানোর অভিযোগও করেছিলেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে, নাইডু অন্ধ্র সফর করছেন এবং জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন। তিনি, 'জগান ছাড়ুন, এপিকে বাঁচান' স্লোগান তৈরি করে কুরনুল এবং এলুরুতে জনসভা দিয়ে তাঁর প্রচার শুরু করেছেন। এই সমাবেশগুলোতে বেশ বড়রকমের ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। নাইডু তাঁর 'ইদেমি খরমা মান রাষ্ট্রনিকি (কেন আমাদের রাজ্য এই ভাগ্যের মুখোমুখি হচ্ছে)' কর্মসূচির অংশ হিসেবে সভা এবং মিছিল করছেন। সেই সব মিছিল এবং সমাবেশ থেকে ওয়াইএসআরসিপি সরকারের নীতি এবং রাজ্যের 'অতি দুর্দশা' নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

দুটি ঘটনায়, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারির পরে, নাইডুর সভায় সমর্থকদের পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যা জগনের নেতৃত্বাধীন অন্ধ্র সরকারকে টিডিপির সভার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং নির্দিষ্ট স্থানে তার রোড শো নিষিদ্ধ করতে সহায়তা করেছে। তেলেঙ্গানা বিভাজন হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার অন্ধ্রকে বিশেষ মর্যাদা না-দেওয়ার প্রতিবাদে নাইডু ২০১৮ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তবে, তিনি এখন ফের এনডিএতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জনসেনা পার্টি (জেএসপি) প্রধান কে পবনকল্যাণ, ওয়াইএসআরসিপিকে পরাজিত করতে অন্ধ্রে বিজেপি-টিডিপি-জেএসপি জোট গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছেন। যদিও বিজেপি এখনও প্রস্তাবটি ঝুলিয়ে রেখেছে। রাজি হওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। এমনকী, নাইডুর গ্রেফতারও বিজেপিকেও নরম করতে পারেনি। তারা এখনও টিডিপি এবং ওয়াইএসআরসিপি থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখছে।

এদিকে, অন্ধ্র পুলিশের সিআইডির অতিরিক্ত ডিজি এন সঞ্জয় বলেছেন যে অমরাবতী জমির মামলায় কথিত অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় নাইডুর বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দক্ষতা উন্নয়ন কেলেঙ্কারির তদন্তের পরিধি আরও প্রশস্ত করা হবে। যা নাইডুর জন্য আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে। তারই মধ্যে, ওয়াইএসআরসিপি বর্তমানে অন্ধ্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি ২০২৪ সালের নির্বাচনে চন্দ্রবাবু নাইডুকে তাঁর নিজের নির্বাচনী এলাকা কুপ্পামে পরাজিত করা এবং টিডিপিকে 'ধ্বংস' করার লক্ষ্যে ওয়াইএসআরসিপি নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে, কুপ্পামে নাইডুর ভোটের শতাংশ প্রথমবারের মতো ৬০-এর নীচে ৫৫.১৮ শতাংশে নেমে আসে। কিছু ভোট জেএসপি এবং বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ওয়াইএসআরসিপির কে চন্দ্রমৌলি ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

আরও পড়ুন- G20 নৈশভোজে ব্রাত্য খাড়গে, চাঁচাছোলা আক্রমণ কংগ্রেসের

পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে নাইডু আশা করছেন যে যদি টিডিপি ২০২৪ সালে জয়ী হয়, তবে তিনি তাঁর ছেলে নারা লোকেশের হাতে দলের ভার তুলে দিতে পারেন। নারা লোকেশ এপ্রিল ২০১৭ থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত মন্ত্রী ছিলেন। টিডিপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক, লোকেশ বর্তমানে একটি ৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা, 'যুব গালাম (যৌবনের কণ্ঠস্বর)' কর্মসূচিতে যুক্ত রয়েছেন। তিনি এই কর্মসূচি গত ২৭ জানুয়ারি চিত্তুর জেলার কুপ্পাম থেকে শুরু করেছিলেন। নাইডু তাঁর ছেলে লোকেশকে টিডিপির প্রথমসারিতে তুলে আনেন। এর পরই টিডিপির প্রবীণ নেতারা লোকেশের পদযাত্রা ঘিরে একটি বৃত্ত তৈরি করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন যে এটি জগনমোহনের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য নারা লোকেশের পদযাত্রা খুবই কার্যকরী হবে।

Chandrababu Naidu TDP bjp YSR Congress Jagan Mohan Reddy
Advertisment