হালিশহর, বনগাঁ, কাঁচারাপাড়ার পর ‘হাতছাড়া’ পুরসভা ফের দখলে আনল মমতা ব্রিগেড। গেরুয়া শিবিরকে টেক্কা দিয়ে আস্থা ভোটে ২৪-০ ব্যবধানে জিতে নৈহাটি পুরসভা নিজেদের হাতের তালুতে রাখল তৃণমূল। বুধবার জেলাশাসকের দফতরে নৈহাটি পুরসভার আস্থা ভোট প্রক্রিয়া চলে। ভোট প্রক্রিয়ায় অবশ্য অংশ নেননি কোনও বিজেপি কাউন্সিলর। বিজেপির দাবি, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই তাঁরা আস্থা ভোটে অংশ নেননি। জানা যাচ্ছে, এদিন, তৃণমূলের ২৩ জন কাউন্সিলর ও বেলা মজুমদার নামে বিজেপির এক কাউন্সিলর তৃণমূলের হয়ে ভোটে অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলে কার্যত ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছিলেন একদা মমতা ঘনিষ্ঠ মুকুল রায়। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বসে একের পর এক তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের হাতে পদ্ম পতাকা তুলে দিতে শুরু করেছেন তৃণমূলের একদা প্রধান সেনাপতি। এই ধারা অব্যাহত রেখেই হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, বনগাঁর মতো পুরসভার একাধিক কাউন্সিলরদের দলে টেনে ‘পুর বোর্ড দখলে’ বলে দাবি করে পদ্ম শিবির। এরপরই নিজেদের দুর্গ বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগে মমতা ব্রিগেড। একের পর এক পুরসভা ‘পুনরুদ্ধার’ করে দলের একদা সৈনিক মুকুল রায়েক জোর ‘ধাক্কা’ দেয় ঘাসফুল শিবির। নৈহাটির হাত ধরে সেই প্রচেষ্টা আবারও সফল হল তৃণমূলের, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন: ‘কার্নিভালে ব্ল্যাক আউট করে অপমান করা হয়েছে’, মমতা সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক রাজ্যপাল
আরও পড়ুন: সংকল্প যাত্রা উতরাতে সব্যসাচীতেই আস্থা বিজেপির
লোকসভা ভোটের পর মুকুল রায়ের হাত ধরে যখন একের পর এক পুরসভা ‘হাতছাড়া’ হতে থাকে শাসকদলের, সে সময়ই নৈহাটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। নৈহাটি পুরসভার ৩১টি ওয়ার্ডই ছিল তৃণমূলের দখলে। লোকসভা ভোটের পর ১৮ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন। পরে বিজেপির ১৮ কাউন্সিলর গত ৩১ মে পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। কিন্তু অনাস্থা ভোটের আগেই পুরপ্রধান পুরসভা চালাতে পারছেন না জানিয়ে রাজ্য সরকার সেখানে প্রশাসক বসিয়ে দেয়। ফলে বিজেপি পুরসভা দখল নিতে পারেনি। এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। কিন্তু আদালতের রায় বেরনোর আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করা ১৮ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন আবার তৃণমূলে ফিরে আসে। ফলে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা ছিল ২৩। আর বিজেপির মাত্র আট জন। নৈহাটি পৌরসভায় অনৈতিকভাবে প্রশাসক বসানো নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে বিজেপির করা মামলায় বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় রায় দিয়ে জানান, ২১ দিনের মধ্যে আস্থা ভোট করে নৈহাটি পৌরসভার নতুন বোর্ড তৈরি করতে হবে। সেই নির্দেশ মতো আজ বেলা ১১টায় বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে আস্থা ভোট হয়। নির্ধারিত সময়ে মধ্যে তৃণমূলের ২৩ ও বিজেপির এক জন কাউন্সিলর নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে আসে তৃণমূল। কিন্তু ভোটাভুটিতে বিজেপির কোনও কাউন্সিলর যোগ দেননি। ফলে একক ভাবে জয়ী হল তৃণমূল।