রাজ্যপাটে পালাবদলের অন্যতম চালিকাশক্তি নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলন। 'ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি' গড়ে বাম জমানার পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে জমি দখল ঠেকিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের মানুষ। শুধু পুলিশই নয়, অভিযোগ আক্রমণের পিছনে ছিল পুলিশের পোশাকে একাংশের দুষ্কৃতীও। সংঘর্ষে প্রাণ যায় বিশ্বজিৎ মাইতি, শেখ সেলিম ও ভরত মণ্ডলদের। লড়াইয়ের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল। আর সেনাপতির ভূমিকায় তরুণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই থেকে আজকের দিনটি ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস হিসেবে পালিত হয়। যা নিয়েও গতবার থেকেই শুরু হয়েছে তৃণমূল বিজেপির দড়ি টানাটানি।
নন্দীগ্রামে শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস উপলক্ষে তৃণমূল ও বিজেপির পৃথক অনুষ্ঠান করল। ভাঙাবেড়া শহিদ মিনারে সভা করেন শুভেন্দু অধিকারী। তার থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে ভাঙাবেড়া ব্রিজের কাছে তৃণমূলের তরফে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ দিন সাত সকালেই নন্দীগ্রামের শহিদ মিনারে পৌঁছে যান বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শহিদদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন তিনি। এরপরই চোখা চোখা বাক্যবাণে রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ শানান তিনি। তৃণমূলকে 'তোলামূল' বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি, 'নন্দীগ্রামকাণ্ডের নেতা লক্ষণ শেঠ এখন তৃণমূলে হয়ে বক্তব্য রাখছেন, হয়তো আগামী দিনে ওই শিবিরে অফিসিয়ালি যাবেন। দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় ১১জন গুন্ডার নামের চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। আর কয়েকটা আছে তাও ফাঁকা হয়ে যাবে। জোঁকের মুখে কি করে দেশি নুন দিতে হয় তা আমি জানি।'
গতবার শহিদ দিবসে শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল। অভিযোগ, তৃণমূল শুভেন্দুকে শহিদ স্মরণ থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিল। সেইদিনের কথাও এদিন উঠে আসে বিরোধী দলনেতার বক্তব্যে। বলেন, 'এই সোনাচূড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছে, কারণ লোক ঐক্যবদ্ধ আছে। গত বছর আমাকে আমরা কর্তব্য করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। যার কারণে আমি মাঝরাতে মালা দিয়ে গেছিলাম। দেখুন সে দিন আর আজ গোটা কুড়ি লোক নিয়ে ওরা করছে শহিদ দিবস পালন করছে, তার মধ্যে রয়েছে ৪০০ পুলিশ। আসলে আজ যারা শহিদ দিবস পালন করছে তারা তৃণমূল নয়, তোলামূল।'
এদিকে ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে নন্দীগ্রামের শহীদ দিবস পালন করল তৃণমূল। হাজির ছিলেন জেলাতৃণমূলের সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল,শহিদ মাতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক ফিরোজা বিবি, প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন, তৃণমূল নেতা আবু তাহের, স্বদেশ দাস, আবদুস সামাদ, সোয়েম কাজী, প্রণব মহাপাত্র,কালীকৃষ্ণ প্রধান, রাধাকৃষ্ণ মণ্ডলেরা। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, 'ভাঙাবেড়া শহীদ স্তম্ভ নন্দীগ্রামের শহিদদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেউ শহীদ মন্দিরকে নিজের বলে দাবী করতে পারেন না। এই অপচেষ্টা রোধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হবে।'