প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব এবং কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল শশীকান্ত শর্মার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। সঙ্গে প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শাল জসবীর সিং পানেসারের বিরুদ্ধেও পেশ করা হল চার্জশিট। ৩,৬০০ কোটি টাকার অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড মামলায় দু'জনেই অভিযুক্ত। সেই মামলাতেই শশীকান্ত শর্মা এবং জসবীর সিং পানেসারের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিলেন তদন্তকারীরা।
যখন অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড চুক্তি হয়, সেই সময় শশীকান্ত শর্মা ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্মসচিব। আর, এই চুক্তির ছাড়পত্রের জন্য পানেসারের সম্মতির দরকার ছিল। সেসব কথা মাথায় রেখেই তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। সঙ্গে আরও তিন সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধেও পেশ হয়েছে চার্জশিট। তাঁরা হলেন প্রাক্তন ডেপুটি চিফ টেস্ট পাইলট এসএ কুন্তে, উইং কমান্ডার (অবসরপ্রাপ্ত) থমাস ম্যাথ্যু ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) এন সন্তোষ।
দু'বছর আগে এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত সেপ্টেম্বরে এই মামলায় মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট পেশ করেছিল। এই সব ব্যক্তিরা প্রত্যক্ষভাবে চুক্তির ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তবে শর্মা এবং অন্যান্যদের নাম চার্জশিটে ঢোকানোর আগে অনুমতির দরকার ছিল। সেই জন্য ওই সব ব্যক্তিদের নাম সেই সময় চার্জশিটে যুক্ত করা হয়নি।
সিবিআই সূত্রে খবর, সুইজারল্যান্ডে তদন্তের সময় তাঁরা একটি নথিতে ' জেএস এয়ার' লেখাটি দেখতে পান। ওই নোটবুকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামের আদ্যক্ষরও ছিল। ওই নোটবুকটি তৈরি করেছিলেন এই মামলায় অভিযুক্ত মাইকেল। তিনি ওই নোটবুকের নাম দিয়েছিলেন 'বাজেট শিট'। পরে সিবিআই দেখে, ইতালির মিলানের আদালতে এই মামলার নথিতেও ' জেএস এয়ার' কথাটির উল্লেখ আছে।
মিলান আদালত জানিয়েছে, এই নোটবইয়ে উল্লিখিত আদ্যক্ষরগুলোয় বিভিন্ন পদাধিকারীদের নামের সঙ্গে তাঁদের পদেরও উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে, 'এএফ' বলতে এয়ার ফোর্সকে বোঝানো হয়েছে। 'বুর' বলতে ব্যুরোক্র্যাট বা আমলাদের বোঝানো হয়েছে। 'পল' বলতে পলিটিশিয়ান বা রাজনীতিবিদদের বোঝানো হয়েছে। এই সব বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ড চুক্তির জন্য কত অর্থ দেওয়া হয়েছিল, তা ইউরো মুদ্রায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপরই নোটবুকের সূত্র ধরে সিবিআই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে শুরু করে। নাম উঠে আসে রাজীব সাক্সেনার। যার সংস্থা মাইকেলের হয়ে আর্থিক তছরুপ করেছিল। নাম জড়ায় প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এসপি ত্যাগীর আত্মীয় সন্দীপ ওরফে কুকি ত্যাগীর। রাজীব সাক্সেনার সহযোগী তথা আইডিএস ইনফোটেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রতাপকৃষ্ণ আগরওয়াল, ব্যবসায়ী প্রবীণ বকসি, কলকাতার দুই ব্যবসায়ী নরেন্দ্রকুমার জৈন ও রাজেশকুমার জৈন, ওম মেটালস ইনফোটেক প্রাইভেট লিমিটেডের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনীল কোঠারি, মাইকেলের ঘনিষ্ঠ তথা ওয়েস্টল্যান্ড সাপোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার কেভি কুনহিকৃষ্ণন, অগাস্টাওয়েস্টল্যান্ডের প্রাক্তন ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিয়াওকোমিনো সাপোনারো, আইনজীবী গৌতম খৈতান ও ওই আইনজীবীর ঘনিষ্ঠ দীপক গয়ালকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে সিবিআই।
জড়িয়ে যায় বেশকিছু সংস্থার নামও। যার মধ্যে রয়েছে চণ্ডীগড়ের আইডিএস ইনফোটেক লিমিটেড, দিল্লির অ্যারোমেট্রিক্স ইনফো সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড এবং নীলমাধব কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেড, মৈনাক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, মরিশাসের ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিস লিমিটেডের নাম।