দল কর্মীদের হনুমান জয়ন্তী ও রামনবমী উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে আর এতেই ক্ষুব্ধ মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস 'হাই ভোলল্টেজ' বিধায়ক আরিফ মাসুদ। রীতিমত নেতৃত্বের উদ্দেশ্য নিয়ে ন তুলছেন তিনি।
বলেছেন যে, 'আশা করব মুসলমানদের রমজান বা অন্যান্য পার্বণ উদযাপনেরও জন্যও দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেবে নেতৃত্ব।' হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক ভরাতে কংগ্রেসেরশ নিয়ে যে দলের অন্দরেই মতভেদ রয়েছে তা স্পষ্ট হয়ে গেল।
এই প্রথম নয়, বছর তিনের আগে, প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের নামকরণ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন মধ্যপ্রদেশের অন্য়তম এই মুসলমান বিধায়ক। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ ঘোষণা করেছিলেন যে ভোপাল শহরের নতুন মেট্রো প্রকল্পটির নাম হবে 'ভোজ মেট্রো'একাদশ শতকের শাসক রাজা ভোজের নামে মেট্রোর নামকরণ করতে আগ্রহী ছিলেন কমল নাথ। কিন্তু প্রকাশ্যেই বেঁকে বসেন কংগ্রেস বিধায়ক আরিফ মাসুদ। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদজ্ঞাপণ মঞ্চে উঠে বলেছিলেন যে, আরিফ মাসুদ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য মঞ্চে উঠেছিলেন। 'দাদা ভাই, মেট্রো প্রকল্পের নাম ভোপাল মেট্রোই রাখুন। আমাদের থেকে দয়া করে ভোপালকে ছিনিয়ে নেবেন না। রাজা ভোজের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান এবং স্কিম রয়েছে।'
ফলে অস্বস্তি বাড়ে কংগ্রেসের। কিন্তু নিজের দাবিতে অটল ছিলেন মাসুদ। বলেছিলেন যে, 'আমি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মতামত তুলে ধরতে নির্বাচিত হয়েছি এবং আমি সেটাই করেছি।'
ছাত্র রাজনীতি থেকেই বেপরোয়া প্রবাবশালী রাজনৈতিক নেতা আরিফ মাসুদ। ১৯৮ সালে স্টেট ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর, মাসুদ ২০০০ সালে সরকারি বেনজির কলেজে স্নাতকোত্তর করার সময় ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা রসুল আহমেদ সিদ্দিকীর কাছ থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় আরিফ মাসুদের। ভোপাল উত্তর থেকে দু'বারের বিধায়ক তিনি। এই কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক মুসলিম ভোটার রয়েছে।
২০০১ সালের জুনে যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মনোনিত হন আরিফ মাসুদ। মুসলমানদের খাটো করে দেখানোর কারণে তৎকালীন হিন্দি চলচ্চিত্র 'গদর'-এর বিরোধিতা করেন, প্রতিবাদস্বরূপ একটি প্রেক্ষাগৃহে হামলা চালান। ফলে দ্বিগিজয় সিং সরকার বিপদে পড়েন। কংগ্রেস যুব নেতা মাসুদকে দল থেকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
এরপর মাসুদ সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং "মুসলিম সমস্যা" উত্থাপন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তিনি২০০৩ সালে ভোপাল উত্তর থেকে কংগ্রেসের আরিফ আকিলের বিরুদ্ধে এসপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু হেরেছিলেন। পরে, তিনি অল-ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলে যোগদান করেন এবং তারপর অল-ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের (এআইএমপিএলবি) কার্যনির্বাহী সদস্য হন।
২০০৭ সালে, তৎকালীন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ যাদব মাসুদকে ফউের হাত শিবিরে ফিরিয়ে আনেন এবং তাঁকে দলের সংখ্যালঘু সেলের মুখপাত্র এবং তারপর আহ্বায়ক করা হয়। তিন বছর পরে, তিনি ভোপাল সেন্ট্রাল থেকে টিকিট পেয়েছিলেন কিন্তু অল্প ব্যবধানে বিজেপির সুরেন্দ্র নাথ সিংয়ের কাছে হেরে যান।
২০১৬ সালে, যখন বিজেপি তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রচচার জোরদার করে তার প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ করেছিলেন কংগ্রেস নেতা মাসুদ। সেই সময় তিন তালাক বিলের বিপক্ষে কংগ্রেসের মুসলিম আইন প্রণেতারাও কার্যত নীরব ছিলেন।
২০১৮ সালে, মাসুদ আবার ভোপাল সেন্ট্রাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য হাতের টিকিট পেয়েছিলেন। বিজেপি যখন তাকে একজন মুসলিম কট্টরপন্থী বলে দেগে দিয়েছিল, তখন মাসুদ তার কপালে গেরুয়া তিলক ওমাথায় টুপি পড়ে প্রচারে প্রচারের সময় হনুমান মন্দিরে গিয়েছিলেন। তাঁর কৌশল কাজ এসেছিল। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর হিন্দু জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, মাসুদ ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। এরপর মাসুদ বলেছিলেন যে, 'এটি গঙ্গা-যমুনি তেহজীবের বিজয়'। পরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য ইফতার পার্টি, হোলি ও দিওয়ালি উদযাপনেরও আয়োজন করেন।
মধ্যপ্রদেশে গত কয়েকটি বিধানসভা ভোটে পদ্ম শিবির মুসলমান প্রার্থী দেননি। কিন্তু কংগ্রেসের মাসুদকে হারাতে সেই চেষ্টারও কোসুর করেনি বিজেপি। যদিও সেই কৌশল সাফল্যের মুখ দেখেনি।
Read in English