গোবলয়ের উত্তরপ্রদেশে গোহত্যা বন্ধ করে তারিফ কুড়িয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদীদের। কিন্তু, সংঘের পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথের কুর্সি বাঁচানোই দায় করে দিচ্ছে এই গোহত্যা বন্ধের চেষ্টা। সাত দফার ভোটে যতই রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের দিকে ভোটপর্ব এগোচ্ছে, ভুলের খেসারত যে কড়ায়-গন্ডায় দিতে হবে, স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যোগীর কাছে।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে তিনি চরম হিন্দুত্ববাদের পথে হাঁটতে চাইলেও, তার জো নেই। দল নারাজ। কারণ, দু'বছর পরই লোকসভা নির্বাচন। মুসলিম ভোটের মেরুকরণ হয়ে গেলে বিপাকে পড়বে ফের কেন্দ্রে বিজেপির আসার সম্ভাবনা। বিপাকে পড়বেন মোদি-শাহরা। তাই ভোটপ্রচারে উন্নয়নের বুলি আউড়াতে স্পষ্ট নির্দেশ আছে।
তার মধ্যেই আদিত্যনাথ বিপদ বুঝে প্রচারে বলে ফেলেছেন, এই ভোট আসলে ৮০ শতাংশের সঙ্গে ২০ শতাংশের যুদ্ধ। কিন্তু, লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এসব আর প্রশ্রয় দিতে নারাজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। খোদ অমিত শাহ ভুল শুধরে দেওয়ার ঢঙে বলেছেন, যোগী আসলে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে ধনী সম্প্রদায়ের লড়াইয়ের কথাই শতাংশের হিসেব দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন।
এই অবস্থায় ঠিক কোন পথে হালে পানি পাবে, বুঝে উঠতে পারছে না উত্তরপ্রদেশ বিজেপি। পাঁচ বছর আগে, সমাজবাদী পার্টির জমানায় উত্তরপ্রদেশে ছাড়া পশুর এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না। সেই সময় বিজেপি এবং সংঘের সুরে সুর মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের কৃষিজীবীরা স্লোগান তুলেছিলেন, ' গোহত্যা বন্ধ কর সরকার।'
কিন্তু, সেই নির্দেশ কার্যকর হতেই পরিস্থিতি একদম বদলে গেছে। উত্তরপ্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ গোহত্যা বন্ধের জন্য ক্ষুব্ধ। কারণ, তাঁরা বিভিন্ন কসাইখানায় কাজ করতেন। যে কসাইখানা থেকে মাংস শুধু স্থানীয় এলাকা বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই না। বিদেশেও রফতানি হত। আর, গোবলয়ের এই রাজ্যের কৃষকরাও ক্ষুব্ধ।
কারণ, ছেড়ে দেওয়া গোরু এবং মোষ তাদের খেতের জমির ফসল নষ্ট করছে। রোগা গোরুকে যা-ই হোক খেতের চারপাশের কাঁটাতার সামলে নিচ্ছে। কিন্তু, মোষ আর ষাঁড় সেসবেরও পরোয়া করছে না। নির্বিবাদে চারপাশের বেড়া ভেঙে বা খুঁটি উপড়ে খেতে ঢুকে পড়ছে। আর, ফসল নষ্ট হচ্ছে কৃষকের। পরিস্থিতি সামলাতে নাম-কা-ওয়াস্তে কয়েকটি গোশালা বা গোয়ালঘর যোগী সরকার বানিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- বাংলা ভাষার সমান বয়েসি আমি
সেখানে থাকা পশুদের জন্য অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু, তা নামমাত্র। কারণ, রাস্তায় চড়ে বেড়ানো বেওয়ারিশ গোমাতা, ষাঁড় আর মোষের সংখ্যা এত বেশি, যে তাদের থেকে ক্ষেত বাঁচানো, কৃষকের শ্রমের ফসল বাঁচানোই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে, ক্ষুব্ধ উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের একাংশ এখন ঝুঁকেছেন সমাজবাদী পার্টির দিকে। পরিস্থিতি দেখে বিরোধী, বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্ব কটাক্ষ করে বলছেন, গোমাতাই শেষ পর্যন্ত গুঁতিয়ে দিল যোগী আর বিজেপিকে। যার ব্যথা ভোটের ফলপ্রকাশের দিন ভুগতে হবে আদিত্যনাথকে।
Read story in English