হাতেগোনা আর কয়েকটা দিন। তারপরই গুজরাটে বিধানসভা ভোট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, মোদী-শাহর রাজ্যে এবার পদ্ম ফুটবে কিনা তা নিয়ে বিজেপি ১০০ শতাংশ নিষ্চিত নয়। ফলে প্রচারে ঝাঁঝ বাড়িয়েছে গেরুয়া বাহিনী। ভূমিপুত্র হওয়ায় কখনও প্রধানমন্ত্রী, এবার কখনও রাজ্যজুড়ে প্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রচারে ভোটারদের তাতাতে এবার ২০০২ সালের গোধরা দাঙ্গার কথা টেনে নলেন অমিত শাহ। কংগ্রেসকে নিশানা করে বললেন, '২০০২ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িতদের এমন একটি পাঠ শেখানো হয়েছিল যে বিজেপি শাসিত গুজরাটে এখন চিরন্তন শান্তি বিরাজ করছে।'
২০০২ সালে গুজরাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিধ্বস্ত হয়। গোধরায় অযোধ্যা কর সেবকরা সবরমতি এক্সপ্রেসের কোচ আগুন দিলে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।
কংগ্রেসের দখলে থাকা খেদা জেলার মহুধায় এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়েঅমিত শাহ বলেন, '2002 সালে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল কারণ কংগ্রেস তা অভ্যাসে পরিণত করেছিল। কিন্তু ২০০২ সালে এমন একটি পাঠ শেখানো হয়েছিল যে ২০০২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এর পুনরাবৃত্তি হয়নি। সাম্প্রদায়িকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। ফলে গুজরাটে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
এর আগে 22শে নভেম্বর বানাসকাঁথা জেলার দীসাতে একটি নির্বাচনী বক্তৃতায় শাহ ২০০২ দাঙ্গার কথা খুব অল্প তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, '২০০১ সালে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং ২০০২ এর পরে, রাজ্যের কোথাও কারফিউ লাগানোর দরকার হয়নি। এখন কি মাফিয়া আছে? কোন দাদা (গ্যাংস্টার) আছে?'
মহুধায়, শাহ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করে বলেন, 'উনি (রাহুল গান্ধী) মহুধায় আসবেন না। কারণ ওঁর ফলাফল জানা। তাই তিনি গুজরাটে মুখ দেখাচ্ছেন না।'
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, কোভিড মহামারী চলাকালীন ৮০ কোটির বাড়িতে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। বলেছিলেন, 'কোভিডে খাদ্য বিতরণের কাজ সুন্দরভাবে করা হয়েছে, কোথাও কোনও দুর্নীতি হয়নি। যদি কংগ্রেসের শাসনকালে এটা হতো, তাহলে গরীবদের জন্য খাদ্যশস্য নেপাল হয়ে দেশের বাইরে চলে যেত, এবং আপনি খেদাতে কংগ্রেস নেতাদের বাড়িতে পার্ক করা চারটি রিং (তাঁর ইঙ্গিত অডি লোগো) সহ নতুন গাড়ি দেখতে পেতেন।'
অমিত শাহর কথায়, '২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে কংগ্রেসের ১০ বছরের শাসনের সময়, ১২ লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছিল। একজন সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন যে, কংগ্রেসের শাসনকালে এত কেলেঙ্কারি হয়েছিল যে তা গণনা করা যায় না এবং বিজেপি শাসনামলে কোনও কেলেঙ্কারিই হয়নি। এই দুইয়ের এটাই মধ্যে পার্থক্য। কংগ্রেসীরা টাকায় ঘর ভরেছে। দারিদ্র্যের নামে তারা ভোট পেয়েছে, কিন্তু গরীবের জন্য কিছুই করেনি। দারিদ্র দূর করার পরিবর্তে, তারা দরিদ্রদের সরিয়ে দিয়েছে।'
২০০২ সালের দাঙ্গা নিয়ে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদীকে 'মৌত-কা-সওদাগর' বলেছিলেন। যা উল্লেখ করে মোদী গুজরাটের প্রচারে সরব হয়েছিলেন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মোদীর আক্রমণ করার কয়েকদিন পরেই শাহের মন্তব্য তাৎপর্যবাহী। চলতি বছরের জুনে, সুপ্রিম কোর্ট এসআইটির সঙ্গে সহমত হয়েছিল যে দাঙ্গার পিছনে 'কোনও বড় ষড়যন্ত্র' ছিল না এবং দাঙ্গা-সম্পর্কিত মামলায় মোদী এবং অন্যদের ক্লিন চিটের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ করে দেয়।