সম্প্রতি ব্রাহ্মণ সংগঠনের একটি সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে বিজেপি নেতা তথা চারবারের লোকসভা সাংসদ অরবিন্দ শর্মা হরিয়ানায় ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'একটা সময় ছিল যখন দেশের ২০ থেকে ২২টি রাজ্যের অন্তত ১০টিতেই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কোনও না-কোনও ব্রাহ্মণ।' চলতি মাসের গোড়ার দিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং মহারাষ্ট্র বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাওসাহেব দাভে বলেছিলেন, 'আমি ব্রাহ্মণদের শুধু পৌরসভার কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই না। আমি একজন ব্রাহ্মণকে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাই।' শর্মা এবং দাভে যা বলেছিলেন, তা কিন্তু স্রেফ তাঁদের বক্তব্যই নয়। এটা আসলে দেশের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়েরই দাবি। দীর্ঘদিন দেশে সুমারি হয়নি। ব্রাহ্মণদের সংখ্যা বর্তমানে গোটা দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় কত, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপের মুখে ক্রমশই জোটবদ্ধ হচ্ছে ব্রাহ্মণ সমাজ।
হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের মত এই দাবি উত্তরপ্রদেশ থেকেও উঠতে পারত। কিন্তু, সেখানে ক্ষমতায় একজন সন্ন্যাসী, যোগী আদিত্যনাথ। তাই দীর্ঘ ৪০ বছর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও না-কোনও ব্রাহ্মণ থাকলেও, সেখান থেকে এই দাবি ওঠেনি। এর অন্যতম কারণ ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়। যারা দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাহ্মণদের বিরোধিতা করে এসেছে। আবার উচ্চবর্ণের যাবতীয় আভিজাত্যও ভোগ করেছে। সেই ক্ষত্রিয় সমাজের প্রতিনিধি বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-ই মণ্ডল কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্যকর করেছেন। আবার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও জাতিতে ক্ষত্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্ন্যাসী হয়েও তিনি ক্ষত্রিয়দের প্রাধান্য বেশি দেন। যা ঘিরে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণদের মধ্যে।
আরও পড়ুন- মণ্ডল প্যানেলের রিপোর্ট, যা কার্যকর করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং
আরএসএস এবং তার তৈরি বিজেপিকে দেশের ব্রাহ্মণসমাজ প্রথমে তাদের সম্প্রদায়ের পক্ষের বলে ভাবা শুরু করেছিল। কিন্তু, পরবর্তীতে ব্রাহ্মণরা ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বুঝতে পেরেছে, আরএসএস এবং বিজেপি আসলে জাতীয়তাবাদী। যারা প্রয়োজনে অব্রাহ্মণদেরও ব্রাহ্মণ করে নেওয়ার কথা প্রচার করে। আর, জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে প্রাধান্য দেয় দলিতদের। একইসঙ্গে, দলিতদের প্রবল শত্রু ক্ষত্রিয়দেরও হাতে রাখেন বিজেপি নেতা। এমন অভিযোগ অতীতে বারবার ওঠায় আরএসএস এবং বিজেপির প্রতি ব্রাহ্মণদের সমর্থন কিছুটা হলেও কমেছে। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
বর্তমানে দেশে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে একমাত্র অসমেই একজন ব্রাহ্মণকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। তিনি হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বাকি কোথাও ব্রাহ্মণদের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসায়নি। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে দেশের ব্রাহ্মণ সমাজের মধ্যে। আর, সেই কারণেই বেসরকারি চাকরিতে ওবিসি সংরক্ষণের দাবির পাশাপাশি ক্রমশই জোরালো হচ্ছে ব্রাহ্মণ মুখ্যমন্ত্রীর দাবিও।
Read full story in English