ঠিক যেন এক্কেবারে মাটি খুঁড়ে কেঁচো ধরতে যেতেই বেরিয়ে এল কেউটে। ছিল গাড়ি চুরির ঘটনা। তার কিনারা করতে গিয়ে পুলিশ পেল জঙ্গি যোগের হদিশ। তা-ও আবার যে সে জঙ্গি না। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) জঙ্গি সংগঠন। আহমেদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলার এই তদন্তকাহিনি হার মানাবে যে কোনও বলিউডি ক্রাইম থ্রিলারকেও। দু'দিন আগেই আহমেদাবাদের ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলার রায় দিয়েছে বিশেষ আদালত। ১৩ বছর আগের ওই মামলায় ৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক।
আর, সেই মামলারই তদন্ত রিপোর্ট তুলে ধরেছে এই রুদ্ধশ্বাস কাহিনি। বিস্ফোরণের পরই ঘটনার তদন্তে নেমেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)। কিন্তু, কীভাবে যে এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটে গেল, তার কোনও সূত্রই পাচ্ছিলেন না গোয়েন্দারা। আর, সেই সূত্র এসেছিল মুম্বইয়ের এক গাড়ি চুরির সূত্রে। তদন্তে জানা যায়, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর প্লেট মুম্বইয়ের। গুজরাট পুলিশের থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পর ২৬ জুলাই এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তে জড়িয়ে পড়ে মুম্বই পুলিশও।
মুম্বইয়ের তত্কালীন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া মামলার ফাইল তুলে দেন দুঁদে পুলিশ অফিসার অরুণ চহ্বানের হাতে। গাড়ি চুরির তদন্তে এই অফিসারের সাফল্য নজরকাড়া। জানা যায়, গাড়িটি নভি মুম্বই থেকে চুরি হয়েছিল। সেই চুরি করা গাড়িই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ব্যবহার করেছিল। চোরদের সূত্র ধরেই পুলিশ সেদিন পৌঁছে গিয়েছিল জঙ্গিদের কাছে। তদন্তে উঠে এসেছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)-এর নাম।
পুলিশের রিপোর্ট বলছে, গাড়ি চুরির তদন্তে নেমে অরুণ চহ্বান তাঁর সোর্সদের কাজে লাগান। দু'জন চোর ধরা পড়ে। তারা ওই মাসেই গাড়ি চুরি করেছিল নভি মুম্বই থেকে। ধৃত দু'জনেই পুলিশকে জানায়, তারা একই ব্যক্তির হাতে চুরি করা গাড়িগুলো তুলে দিয়েছিল। সেই ব্যক্তির নাম আফজল উসমানি। সে বছরের আগস্টে উত্তরপ্রদেশের মউ জেলা থেকে উসমানিকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখা।
আরও পড়ুন- আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে যুদ্ধের পথে রাশিয়া
২০০৮ সালের আহমেদাবাদে ৭০ মিনিটের মধ্যে ২২টা জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছিল। কোথাও বাসের মধ্যে ছিল বিস্ফোরক। কোথাও দাঁড় করিয়ে রাখা সাইকেল। কোথাও আবার গাড়ির মধ্যে রাখা ছিল আইইডি। সবমিলিয়ে এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৬ জন। ওই বছর এই নিয়ে তিনটি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটেছিল। আহমেদাবাদের একদিন আগেই কেঁপে উঠেছিল দক্ষিণের বেঙ্গালুরু। আর তার একমাস আগে, মে মাসে রাজস্থানের জয়পুর শুনেছিল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। ধৃত উসমানিই পুলিশকে জেরায় বলে দেয়, হামলাগুলো একই সংগঠনের কাজ।
Read story in English