একসময় নেতৃত্ব বেছে নিয়েছিল সুদক্ষ নেতাদের। কিন্তু দেশটার নাম ভারতবর্ষ, এবং এখানে জাত-পাতের রাজনীতি বড় ফ্যাক্টর। তাই উত্তরাখণ্ড, কর্ণাটকের পর গুজরাটেও জাত-পাতের রাজনীতির পথ ধরল বিজেপি। একাধিক রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাবধানী গেরুয়া শিবির। জাত-পাতকে প্রাধান্য দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিয়েছে বিজেপি।
উত্তরাখণ্ড থেকে কর্ণাটক, তার পর সাম্প্রতিক উদাহরণ গুজরাট। যেখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ পতিদার সম্প্রদায়ের মুখকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছে। মোদীর-রাজ্যে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল পতিদার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার। আগামী বছরের শেষেরদিকে ওই রাজ্যে ভোট। এদিকে, পতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেল এখন কংগ্রেস শিবিরে। জাত-পাতের অঙ্ককে মাথায় রেখে তাই প্রথমবারের বিধায়ক ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি।
সূত্রের খবর, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস বিজেপির রণকৌশল বদলের বড় উদাহরণ বলা যেতে পারে। এই দুজনকে মোদী-শাহ জুটি বেছে নেন দুই রাজ্যের বড় দুই সম্প্রদায় জাট এবং মারাঠার বাইরে থেকে। দুজনকে নিয়ে দুই রাজ্যে নেতৃত্বের মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে।
একইভাবে ২০১৬ সালে পতিদার আন্দোলনের মধ্যেই বিজেপি কড়া বার্তা দিতে গিয়ে বেছে নেয় বিজয় রুপানিকে। প্রথমবার কোনও জৈন নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসায় গেরুয়া শিবির। গদির দাবিদার অনেকেই ছিলেন, এমনকী প্যাটেলও। তার ফলও পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনে কোনওমতে সরকার গড়ে তারা। তাও রুপানিকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।
আরও পড়ুন এক সপ্তাহে দু’বার দিল্লি যাত্রা, এবার হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে জোর জল্পনা
কিন্তু সময়ের দাবি বুঝতে একটু দেরি করল বিজেপি। রুপানির জায়গায় পতিদার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে ভোটের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেছে তারা। ভূপেন্দ্রর নির্বাচন এটাই প্রমাণ করে, হাইকম্যান্ডে মোদী থাকতেও বিজেপি ভোটের রাজনীতির অঙ্ক বুঝতে পারেনি। একইভাবে আগে উত্তরাখণ্ডে ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সংঘের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার জায়গায় চার মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন তিরথ সিং রাওয়াত। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা নেওয়া ঠাকুর সম্প্রদায়ের পুষ্কর সিং ধামিকে গদিতে বসায় বিজেপি। তবে এবার পাহাড়ের মানুষকে সঙ্গে পাওয়ার জন্য।
কর্ণাটকেও একই চিত্র। দলীয় কোন্দল ও হাইকম্যান্ডের চাপে পদত্যাগ করেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। তাঁর জায়গায় রাজ্যের বড় ধর্মীয় সম্প্রদায় লিঙ্গায়েত ব্রাহ্মণ বাসবরাজ বোম্মাইকে বেছে নেয় বিজেপি। এর পিছনেও রাজ্যের জাত-ধর্মের রাজনীতি রয়েছে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর মোদী-শাহের নেতৃত্বে বিজেপি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জাত-পাতের রাজনীতির পথে না হেঁটে নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিয়েছিল। সেই কারণে ব্রাহ্মণ নেতা ফড়ণবিস মারাঠা সম্প্রদায়ের না হয়েও মোদীর গুডবুকে থাকার দরুণ মুখ্যমন্ত্রী হন। হরিয়ানাতেও খাট্টার জাট না হয়েও গদিতে বসেন এবং ঝাড়খণ্ডে অ-আদিবাসী রঘুবর দাস মুখ্যমন্ত্রী হন। সেই পরীক্ষা সময়ের সঙ্গে ব্যর্থ হওয়াতেই পুরনো সমীকরণেই হাঁটছে বিজেপি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন