উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করতে পরিবারবাদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু, যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ মন্ত্রিসভায় অন্তত ছয়জন এমন মুখ রয়েছেন যাঁরা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন দু'জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী সূর্য প্রতাপ শাহী এবং জিতিন প্রসাদ, স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রতিমন্ত্রী নীতিন আগরওয়াল এবং সন্দীপ সিং এবং দু'জন প্রতিমন্ত্রী মায়াঙ্কেশ্বর সিং এবং সুরেশ রাহি।
তবে, ক্ষমতাসীন বিজেপি অবশ্য এইবার রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে এমন বেশ কয়েকজনকে বাদ রেখেছেন যাঁরাও পরিচিত রাজনৈতিক পরিবারের থেকেই এসেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুখ, আশুতোষ ট্যান্ডন (মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন এমপি গভর্নর লালজি ট্যান্ডনের ছেলে), সিদ্ধার্থ নাথ সিং (লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি), অতুল গর্গ (প্রাক্তন গাজিয়াবাদের মেয়র দীনেশ গর্গের ছেলে), নীলিমা কাটিয়ার (প্রাক্তন মন্ত্রী প্রেমলতা কাটিয়ারের কন্যা)।
রাজনৈতিক পরিবারের প্রতিভূ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়কও এবার ৫২ সদস্যের যোগী মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। এঁদের মধ্যে রয়েছে পঙ্কজ সিং (প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পুত্র), বিমলেশ পাসোয়ান (বিজেপি সাংসদ কমলেশ পাসোয়ানের ভাই), ফতেহ বাহাদুর সিং (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর সিংয়ের পুত্র), রানি পাকশালিকা সিং (প্রাক্তন মন্ত্রী মহেন্দ্র অরিদমন সিংয়ের স্ত্রী), অদিতি সিং (প্রাক্তন বিধায়ক অখিলেশ সিংয়ের কন্যা), প্রতীক ভূষণ সিং (বিজেপি সাংসদ ব্রজভূষণ শরণ সিংয়ের পুত্র), অনুরাগ সিং (রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ওম প্রকাশ সিংয়ের পুত্র), শশাঙ্ক ভার্মা (প্রাক্তন সিনিয়র নেতা রাম কুমার ভার্মার পুত্র), সৌরভ শ্রীবাস্তব (প্রাক্তন মন্ত্রী হরিশচন্দ্র শ্রীবাস্তবের পুত্র), হর্ষবর্ধন বাজপেয়ী (প্রাক্তন বিধায়ক অশোক বাজপেয়ের পুত্র), সুনীল দ্বিবেদী (প্রাক্তন সিনিয়র নেতা ব্রহ্মদত্ত দ্বিবেদীর পুত্র), নীরজ ভোরা (লখনউয়ে প্রাক্তন মেয়র ডিপি ভোরার ছেলে), অর্চনা পান্ডে (প্রাক্তন সিনিয়র নেতা রাম প্রকাশ ত্রিপাঠীর কন্যা)।
দ্বিতীয় যোগী মন্ত্রিসভায় যে ৬ জন পরিবাদের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত-
সূর্য প্রতাপ শাহী, ক্যাবিনেট মন্ত্রী
দেওরিয়া জেলার পাথরদেবের বিধায়ক সূর্য প্রতাপ শাহী দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯১ সালে কল্যাণ সিং-এর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। শাহী উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতিও। প্রথম যোগী আদিত্যনাথে সরকারে সূর্য প্রতাপ কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কাকা রবীন্দ্র কিশোর শাহী ছিলেন ভারতীয় জনসংঘর উত্তরপ্রদেশ ইউনিটের প্রধান। রাম নরেশ যাদবের নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালের জনতা পার্টির উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়েছিল। সেই সরকারের একজন মন্ত্রীও ছিলেন রবীন্দ্র কিশোর। এছাড়াও কিশোর রাজ্যের পূর্ব প্রান্তের জনসংঘের বিশিষ্ট নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৮২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, সূর্য প্রতাপ শাহী তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করছেন।
জিতিন প্রসাদ, ক্যাবিনেট মন্ত্রী
জিতিন প্রসাদ ছিলেন কংগ্রেস নেতা। এক বছরও হয়নি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। প্রথম বার পদ্ম প্রতীকে ভোট লড়েই জয় হাসিল করেছেন। ঠাঁই হয়েছে যোগী মন্ত্রিসভায়। জিতিনের বাবা জিতেন্দ্র প্রসাদ ছিলেন একজন বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা। তিনি চারবার লোকসভা সাংসদ। প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এবং পিভি নরসিমা রাও-য়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন। গত বছর জুনে বিজেপিতে না যাওয়া পর্যন্ত জিতিন ছিলেন কংগ্রেস 'যুবরাজ' রাহুল গান্ধীর কোর কমিটির সদস্যদের অন্যতম।
নীতিন আগরওয়াল, স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী
নীতিন আগরওয়াল প্রবীণ কংগ্রেস নেতা নরেশ আগরওয়ালের ছেলে। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে যিনি দলবদলু হিসাবেই খ্যাত। ১৯৯৭ সালে কল্যাণ সিং-এর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অংশ হওয়ার জন্য কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে লোকতান্ত্রিক কংগ্রেস গঠন করেন নীতিন আগারওয়াল। ২০১৮ সালের মার্চে বিজেপিতে যোগদানের আগে এসপি ও বিএসপি-তেও ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে সমাজবাদী পার্টির হয়ে পারিবারিক কেন্দ্র হারদোই থেকে জিতে বিধায়ক হন নীতিন। কিন্তু পরে তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ না করায় দল ছাড়েন তিনি। বিজেপির সহায়তায় বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের ভোট হারদোই থেকেই গেরুয়া পতাকা নিয়ে জিতেছেন নীতিন। যোগী তাঁকে নিজের মন্ত্রিসভায় জায়গাও দিয়েছেন।
সন্দীপ সিং, স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী
সন্দীপ সিং হলেন বিজেপি ও জনসংঘের নেতা প্রয়াত কল্যাণ সিং-এর নাতি। কল্যাণ সিং দু'বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন। সন্দীপের বাবা রাজবীর বর্তমানে বিজেপির সাংসদ। রাজবীর বিজেপির টিকিটে আত্রৌলি থেকে জিতেছেন। তাঁর মা প্রেমলতাও দলের প্রাক্তন বিধায়ক। সন্দীপ প্রথম আদিত্যনাথ সরকারেও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
মায়াঙ্কেশ্বর সিং, প্রতিমন্ত্রী
মায়াঙ্কেশ্বর সিং রায়বেরেলির তিলোইয়ের এক প্রাক্তন রাজপরিবারের সদস্য। তাঁর বাবা মোহন সিং ১৯৬৯ সালে তিলোই থেকে জনসংঘের একজন বিধায়ক ছিলেন, যিনি পরে কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৭৪ ও ৭৭ সালে তিলোই আসন থেকেই জয়লাভ করেছিলেন। মায়াঙ্কেশ্বর আগে সমাজবাদী পার্টিতে ছিলেন, পরে বিজেপিতে যোগ দেন। পদ্ম টিকিটেই তিলোই থেকেই ২০১৭ ও ২২ সালের ভোটে জয়ী হন।
সুরেশ রাহি, প্রতিমন্ত্রী
সুরেশ রাহির বাবা রামলাল রাহি কংগ্রেস, পরে জনতা পার্টি, তারও পরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হরগাঁও থেকে দু'বার বিধায়ক রামলাল পরে মিসরিখ কেন্দ্র থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি নরসিমা রাও সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। রামলালও কংগ্রেস ছেড়েছিলেন কিন্তু ২০১৭ সালে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হস্তক্ষেপে ফের দলে ফিরে আসেন। তবে তাঁর ছেলে বিজেপিতেই ছেতে যান। ২০১৭ ও ২২-য়ের বিধানসভা ভোটে হরগাঁও থেকেই জয় পান। এর আগে একই কেন্দ্র থেকে সুরেশের দাদা রমেশ রাহি এসপির টিকিটে বিধায়ক ছিলেন।
Read in English