প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডাকা অনলাইন বৈঠকে গত ১৬ নভেম্বর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার যোগ দিয়েছিলেন। ওই অনলাইন বৈঠকেই ছিলেন দুই নির্বাচন কমিশনারও। শুক্রবারই এই প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে। এরপরই মোদী সরকারকে নিশানা করছেন বিরোধিরা। স্বশাসিত সংস্থা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস, সিপিআইএম, ডিএমকে।
এই প্রসঙ্গে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর দফতর এইভাবে কথা বলতে পারে না। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা। তাহলে কীভাবে ওরা কমিশনারদের ডেকে পাঠায়? এরপরও নিরপেক্ষ ভোট হবে, কীভাবে তা আশা করব? আগামিতে পাঁচ রাজ্যে ভোট রয়েছে, এই কমিশনের থেকে ন্যায্য বিচারের প্রত্যাশা কীভাবে রাখবো?'
তৃণমূলের সাংসদ জহর সরকার তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, পিএমও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে বৈঠকে ডাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে কোনও বৈঠকে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না তাঁর।
বিষয়টি চোখ খুলে দেওয়ার মত বলে মনে করেন সিপিআইএম সাংসদ জন ব্রিট্টাস। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বাম সাংসদ বলেছেন, 'কীভাবে মোদী সরকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করছে তা গত ১৬ তারিখের বৈঠক দেখিয়ে দিয়েছে।' জন ব্রিট্টাসের কথায়, 'আলোচনায় অংশ মেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে লিখিত চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা বিরল। এর আগেও আমরা কেন্দ্রের কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ ও স্বশাসিত সংস্থার আপোসের উদাহরণ দেখেছি। স্পষ্ট যে, এই সরকার এ দেশের সকল স্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষত কমিশনকে পঙ্গু করে দেওয়ার কাজ চালাচ্ছে। যা দেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলছে।'
এই ঘটনাকে 'ভয়াবহ' বলে অবিহিত করেছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটে সীতারাম লিখেছেন, 'পিএমও কীভাবে সাংবিধান স্বীকৃত স্বাধীন এক সংস্থার প্রধানকে সমন পাঠায়? অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একজনকে বাধ্য করা হয়েছে? নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা ছেড়ে কমিশন কীভাবে এতটা দাসত্বপূর্ণ আচরণ করতে পারে?'
ডিএমকে নেতা তিরুচি শিবা বলেন, 'সাংবিধানিক, স্বাধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি কখনই সরকারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না… তাদের অবশ্যই সন্দেহের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। আমরা এই দাবি দীগ্ৎদিন ধরে জোড়ালভাবে করছি। এ কারণেই সংস্থাগুলিকে এত ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে তাদের লোভ-লালসার জন্য…ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটাই আমাদের সামনে বড় প্রশ্ন। যেসব ঘটনার নজির সামনে আসছে, যেভাবে বিভিন্ন বিলগুলি পাস করানো হচ্ছে- তা আসলে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা। গণতন্ত্রে এটা ভালো লক্ষ্ণ নয়।'
কংগ্রেস নেতা খাড়গের কথায়, 'নিরপেক্ষ সংস্থা সিবিআই, ইডি সহ সাংবিধানিক নানা বিষয়কে ধ্বংস করে দিচ্ছে মোদী সরকার। অন্য কোনও রাষ্ট্রে এর নজির নেই।'
উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র এবং দুই নির্বাচন কমিশনার, রাজীব কুমার এবং অনুপ চন্দ্র পান্ডে গত ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডাকা অনলাইন বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। আইন মন্ত্রকের কাছ থেকে একটি চিঠি পাওয়ার ঠিক একদিন পরেই ছিল ওই বৈঠক। একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, আইন মন্ত্রকের থেকে ওই চিঠি পাওয়ার পরেই কমিশনের অন্দরে একটি সাময়িক অস্থিরতা তৈরি হয়ছিল। চিঠিটি যেন একটি সমনের মতো ছিল। এমনকী চিঠি পাঠানোর সেই প্রক্রিয়াটিকে নজিরবিহীন এবং সাংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘনের মতো কাজ বলেও একটি সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন