সময় এগোনোর সঙ্গেই মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে টালমাটাল বাড়তে শুরু করেছে। বিদ্রোহী শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডে শর্ত দিতে শুরু করেছেন। তাঁর শর্ত, কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গ ছাড়তে হবে শিবসেনাকে। যার অর্থ, সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসা বা বিজেপির হাত ধরা ছাড়া আর কিছুই নয়। পালটা এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার ইতিমধ্যেই শিন্ডেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তার মধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে শিন্ডের শিবিরে সত্যিই ঠিক কতজন বিধায়ক রয়েছেন, তা নিয়ে।
চাপানউতোরের রাজনীতি টিকিয়ে রেখে বর্তমানে পদত্যাগের নারাজ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। তিনিও শর্ত দিয়েছেন যে বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার পরই তিনি প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন। একইসঙ্গে শিবসেনা অভিযোগ করেছে, তাদের বিধায়কদের অপহরণ করা হয়েছে। আর, এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় জনতা পার্টি। পালটা, ভিনরাজ্যে বিজেপির আশ্রয়ে থাকা মহারাষ্ট্রের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী শিন্ডে টুইট করেছেন।
সেই টুইটে একনাথ শিন্ডে লিখেছেন, তিনি শিবসেনা ও শিবসৈনিকদের জীবিত থাকা নিশ্চিত করতে চান। সেই কারণে কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে তৈরি অস্বাভাবিক জোট থেকে শিবসেনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, শিবসেনা-এনসিপি ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মহাবিকাশ আগাড়ির জোটে শিবসেনা সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত থেকেছে। উপকৃত হয়েছে এনসিপি ও কংগ্রেস।
তার ফলে শিবসৈনিকরা হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। একথা বলার পাশাপাশি কখনও আবার শিন্ডে বলছেন, উদ্ধব ও আদিত্য ঠাকরে তাঁর দফতরের কাজে নাক গলাতেন। তাই তিনি স্বাধীনভাবে নিজের দফতরের কাজটাই করে উঠতে পারেননি। সেই কারণেই দলবল নিয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে শিন্ডে লিখেছেন, 'আমাদের মিত্ররা যখন শক্তি অর্জন করছিল, তখন শিবসৈনিকদের ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল। দল ও সৈনিকদের টিকে থাকার জন্য এই অস্বাভাবিক জোট থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। মহারাষ্ট্রের বৃহত্তর উন্নতির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।'
এই পরিস্থিতিতে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার এবং সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বুধবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাসভবনে গিয়েছিলেন। রাজ্যের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণে, উদ্ধব বলেছেন যে তিনি বিদ্রোহী বিধায়কদের থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পেলে তবেই পদত্যাগ করতে রাজি। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করা সরকারি বাসভবন ছেড়ে যেতেও প্রস্তুত। একথা বলার পরই অবশ্য উদ্ধব তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে জিনিসপত্র বের করে নেন। ফিরে যান পারিবারিক বাসভবন মাতশ্রীতে।
যদিও শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে উদ্ধব ঠাকরে আপাতত পদত্যাগ করছেন না।
আরও পড়ুন- ‘বিদ্রোহী’রা ব্যাখ্যা দিলেই পদ ছাড়বেন উদ্ধব, পাল্টা চাপ মুখ্যমন্ত্রীর
শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্দের বিদ্রোহের সম্পর্কে উদ্ধব বলেন, 'শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়করা আমার সামনে এসে পদত্যাগপত্র চাইলে আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দেব। যদি কোনও বিধায়ক আমাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে না-চান, তবে আমি বর্ষা বাংলো (মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন) থেকে আমার সমস্ত জিনিসপত্র মাতশ্রীতে (নিজের বাড়ি) নিয়ে যেতে প্রস্তুত।' একইসঙ্গে বিদ্রোহী বিধায়কদের প্রসঙ্গে উদ্ধব বলেন, 'নিজের লোকেদের আঘাতই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।'
শিন্ডে শিবিরের অবশ্য দাবি, ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে থাকা শিবসেনার ৩৪ জন বিদ্রোহী বিধায়ক তাঁকে মহারাষ্ট্রে দলের নেতা হিসাবে নিযুক্ত করার একটি প্রস্তাব পাস করেছেন। এই প্রস্তাব পাশের কারণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, 'এনসিপি এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার শিবসেনার গঠনের এবং আদর্শের বিরোধী। এনিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে।'
Read full story in English