দেশের প্রথম দলিত মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ধীরে ধীরে জাতীয় তো বটেই, আঞ্চলিক রাজনীতিতেও অস্তমিত মায়াবতী-ক্যারিশ্মা। সেই সঙ্গে অস্তাচলে তাঁর দল বহুজন সমাজ পার্টিও। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ফলাফলে দুপুর পর্যন্ত ট্রেন্ডে দেখা গিয়েছে, মাত্র দুটি আসনে এগিয়ে বসপা। ভোট শতাংশও ১৩-র নীচে। ১৯৯৩ সালে সবচেয়ে কম ছিল ১১.১২ শতাংশ। তার থেকে এবার একটু বেশি।
কিন্তু দেশের একমাত্র ঘোষিত দলিতদের পার্টির এই হাল কেন?
২০০৭ সালে যখন শেষবার মসনদে বসেন মায়াবতী, সেবার ২০৬টি আসনে জিতেছিল বসপা। ৩০.৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তাঁর দল। পরের বার ২০১২ সালেও ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বসপা। তার পরের বার ২০১৭ সালে ১৯টি আসনে জেতে বসপা, প্রায় ২২ শতাংশ ভোট পেয়ে।
গৌতম বুদ্ধ নগরের বাদলপুর গ্রামের শিক্ষিকা থেকে রাজনীতিবিদ ৬৬ বছরের মায়াবতী, যাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে বহেনজি বলে ডাকা হয়, প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হন ১৯৯৫ সালে। কিন্তু কয়েক মাস টিকেছিল তাঁর সরকার। তার পরে বেশ কয়েকবার উত্তরপ্রদেশে কোনও দলই পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মায়াবতী। তা-ও আবার বিজেপির সাহায্যে। তার পর ২০১৭ সালে একার জোরেই পূর্ণ ক্ষমতায় বিধানসভায় জেতেন। চার বার মোট মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেন তিনি।
২০০৭-এর ভোটে দলিতরা ভোটের ঝুলি উজাড় করে দেয় বসপা-কে। সেবার শাসক সমাজবাদী পার্টি ধরাশায়ী হয়। সামাজিক কল্যাণ, ব্রাহ্মণদেরও আকর্ষণ করেছিল বসপার নীতি।
আরও পড়ুন গোয়ায় ঘাস-ফুলের ফল শূন্য, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলকে টেক্কা আপের
১৯৮৪ সালে বসপা গঠন হওয়ার পর রাজনৈতিক গুরু কাঁশী রাম দলের দায়িত্ব মায়াবতীর হাতে তুলে দেন। সেই সময় তাঁর দলের স্লোগান ছিল, গুন্ডাদের বুকে চড়ে, হাতিতে মোহর লাগাও। বসপার প্রতীক হাতি। ব্রাহ্মণদের কাছে টানতে স্লোগান ছিল, পণ্ডিত শঙ্খ বাজাবে, হাতি এগিয়ে যাবে।
কিন্তু বর্তমানে জাতীয় রাজনীতি তো বটেই, উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতেও অস্তমিত বহেনজির ম্যাজিক। একটা সময় দলিত ভোট মানেই মায়াবতী এবং বসপা। দলিতদের ধ্বজাধারী মায়াবতী এখন অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পথে। এবারের ইউপি নির্বাচনেও তেমন একটা প্রচারে দেখা যায়নি তাঁকে। মোটে ১৮টি সভা করেছেন তিনি। বড় কোনও মুখও নেই দলে তিনি ছাড়া। দলের নির্বাচনের ভার সতীশ চন্দ্র মিশ্রের কাঁধে দিয়েছিলেন মায়াবতী। লক্ষ্মীবারে উত্তরপ্রদেশের জনতা তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া করে দিলেন, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।