গত অক্টোবরে ঢাকঢোল পিটিয়ে ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। মাথা ন্যাড়া করে প্রায়শ্চিত্ত সেরে রাজনৈতিক মহলে সারা ফেলেছিলেন। কিন্তু দলের কাজকর্মে গত কয়েক মাস ধরেই বিরক্ত ছিলেন তিনি। নেতৃত্বকে জানানোর সঙ্গেই প্রকাশ্যে একাধিকবার সে কথা বলেওছিলেন আশিসবাবু। তাঁর মত নেতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে হতাশাও প্রকাশ করেছিলেন। সেই বিজেপি বিধায়কই শুক্রবার তৃণমূল ছাড়লেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন। তুললেন ভয়ঙ্কর অভিযোগ। বললেন, 'বিজেপির সঙ্গে পরকীয়া করছে তৃণমূল।'
দল ছাড়ার বিষয়টি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন সুরমার বিধায়ক আশিস দাস। তিনি বলেছেন, 'তৃণমূল বাটপাড়ের দল। রাজ্যবাসী এখন বলবেন যে সুবল ভৌমিকের মত আশিস দাস কতবার দল পাল্টাবে? আমি সুবলের মত দল পাল্টানোর লোক নই। মানুষের কথা ভেবে আমি সবসময়ই নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে জঞ্জাঞ্জলি দিয়েছি। কোনও কিছুর বিনিময়ে নয়, তৃণমূলটা সততার সঙ্গে করেছি। অভিষেকবাবু বলেছিলেন ভোটের একবছর আগে থেকে এখানে ঘাঁটি গেঁরে বসবেন। কিন্তু থাকলেন না। কারণ বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল পরকীয়া করছে। বাংলার মানুষের কাছে ত্রিপুরাবাসী মানুষ নয়। আমাদের হেয় করা হচ্ছে। তৃণমূলের আসল উদ্দেশ্য বিজেপিকে সুযোগ করে দেওয়া। আগামী নির্বাচনে তৃণমূলের ফলাফলে বিপর্য হবে। আসলে তৃণমূল বাংলায় শাসন নিরাপদ রাখতে ত্রিপুরায় কংগ্রেসকে দুর্বল করতে চেয়েছে।'
তাঁকে মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। গত কয়েকমাস ধরেই এই অভিযোগ তুলেছিলেন আশিস দাস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকেও এ দিন তৃণমূল ত্যাগী এই বিজেপি বিধায়ক বলেন, 'সামনেই উপনির্বাচন। সেজন্য আমি আলাপ আলোচনা চালাচ্ছি। বৃহস্পতিবার আমার বিধানসভা সুরমায় তৃণমূলের কর্মসূচি ছিল। অথচ আমিই আমন্ত্রণ পেলাম না। সুস্মিতা দেব ফোন করে আমাকে বললেন ওই কর্মসূচি সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি আসবেন। এলেন না। ওনাকে ফোন করতে নয়-রিচেবেল বলল। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে তৃণমূল ছাড়ব। যেখানে আমার গুরুত্ব নেই সেই দল করে কীহবে?'
আশিসবাবুর ভবিষ্যত রাজনৈতিক পরিকল্পনা কী? তিনি জানিয়েছেন, আপাতত কোনও দলে যোগ দেবেন না। বা নতুন দল গঠন করবেন না। কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই তিনি যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
তৃণমূল কোন কমিটির সদস্য করেছিল আশিস দাসকে। দল ছাড়া প্রসঙ্গে সেরাজ্যে তৃমূলের দলীয় পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আগামী ২৩ জুন ত্রিপুরার চারটি বিধানসভায় উপনির্বাচন। তারমধ্যে সুরমাও রয়েছে। উনি হয়তো ভেবেছেন দল তাঁকে প্রার্থী করবে না বা উনি জিততে পারবেন না। তাই কোনও উস্কানিতে দল ছেড়েছেন।'
কেন তাঁকে অবহেলা করা হচ্ছে? আগেই এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আশিস দাস আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'আমি গ্রাম থেকে এসেছি। বিজেপিতে থেকেও দু'বছরের মধ্যে প্রতিবাদী মুখ হয়েছি। সারা রাজ্যের মানুষ আমাকে চেনে। আমার কোনও কালিমা নেই। আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি আগরতলায় থাকব। সেখানে থাকলে অল্পদিনে রাজনীতিতে এসে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলে বিভিন্ন নেতৃত্বের কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সমস্ত পরিকল্পনা করে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।'
তৃণমূলের লোকসভার প্রাক্তন প্রার্থী ভৃগুরাম রিয়াং, দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি আশিসলাল সিংও বেসুরো। নিষ্ক্রিয় হয়েই রয়েছেন তাঁরা। রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জন যে, সুরমার বিধায়কের পথেই হাঁটতে পারেন এই দুই তৃণমূল শীর্ষ নেতাও। আদিবাসীদের দল তিপ্রা মথা-র সভাপতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে আগেই জানিয়েছিলেন যে, তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বাংলার বাইরে মমতা-অভিষেকের পাখির চোখ বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরা। কিন্তু, সে পথ যেন ক্রমশ বন্ধর হচ্ছে তৃণমূলের কাছে। এর আগে এক কাউন্সিলর দল ছেড়ে বিজেপিতে ভিড়েছে। এবার দল ছাড়লেন আশিস দাস। আগামিতে কারা কারা একই পথ অবলম্বন করবেন? পার্বত্য রাজ্যে যেন প্রমাদ গুনছে বাংলার শাসককূল।