শতাব্দী প্রাচীন দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দলীয় কাঠামোর খলনলচে পাল্টানোর দাবিতে সোচ্চার হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধবাদী বলেই তকমা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কংগ্রেসের G-23 গোষ্ঠীভুক্তদের অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই গুলাম নবি আজাদই কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিলেন। দলের সব পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সনিয়া গান্ধীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। ইস্তফাপত্রে কড়া আক্রমণ করেছেন রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বপ্রদানের ক্ষমতাকে।
দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে সম্বোধন করা পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠিতে আজাদ উল্লেখ করেছেন যে, কংগ্রেসের পরিস্থিতি 'না ফেরার' পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। চিঠিতে লিখেছেন, 'পুরো সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়া একটি প্রহসন ও প্রতারণা। দেশের কোথাও কোথাও সংগঠনের কোনও পর্যায়ের নির্বাচন হয়নি। এআইসিসির হ্যান্ডপিকড লেফটেন্যান্টদের ২৪ আকবর রোডে বসে এআইসিসি পরিচালনাকারী কোটারি দ্বারা প্রস্তুত তালিকায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।'
হাতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার মুহূর্তে রাহল গান্ধীকে কড়া নিশানা করেছেন পাঁচ দশকের পুরনো নেতা গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেসের শোচনীয় অবস্থার জন্য কার্যত তাঁকেই দায়ী করেছেন আজাদ। তাঁর কথায়, ' রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে প্রবেশের পরে, বিশেষ করে ২০১৩ সালে দলের সহ-সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার পর, দলের অন্দরে পূর্বের বিদ্যমান পরামর্শমূলক প্রক্রিয়াটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সব সিনিয়র ও অভিজ্ঞ নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, পরিবর্তে অনভিজ্ঞ দালালদের গোষ্ঠী দল পরিচালনা করতে শুরু করেছে।'
সম্ভবত চলতি বছরেই হবে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা ভোট। উপত্যকার ভোট বিবেচনা করে সম্প্রতি তাঁকে জম্মু-কাশ্মীরের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যানহিসেবে নিযুক্ত করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, হাইকমান্ডের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। পাশাপাশি উপত্যকার পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটি থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
ফলে প্রকাশ্যে চলে আসে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের চিত্র। গত কয়েক বছর ধরেই কংগ্রেসের অন্দরে চর্চায় রয়েছেন G-23 নেতারা। ২০২০ সালে ২৩ জন কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতারা সনিয়া গান্ধীকে দলীয় নেতৃত্ব পরিবর্তনের কথা জানিয়ে বিস্ফোরক চিঠি লিখেছিলেন। সেই তালিকার অন্যতম বড় নাম ছিল গুলাম নবি আজাদ। সেই থেকেই দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের পতন তরান্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দল ছাড়লেন কয়েক দশকের হাত শিবিরের এই নেতা।
জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন ও ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট রয়েছে। তার আগে গুলাম নবি আজাদের কংগ্রেস থেকে ইস্তফার সিদ্ধান্ত শতাব্দী প্রাচীন দলের কাছে বড় অস্বস্তির বলেই মনে করা হচ্ছে।