জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিষয়, 'আমার আদর্শ নাথুরাম গডসে'। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা। জয়ীদের দেওয়া হল পুরস্কারও। এতটুকু পড়ে হয়তো ভাবছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরং দলের কোনও কর্মসূচি কথা হচ্ছে। কিন্তু, না। গুজরাতের সরকারি প্রকল্পে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
ভালসাদ জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এই প্রতিযোগিতায় যোগও দিয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয় ব্যাপক জলঘোলা। পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত বলির পাঁঠা করা হল ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সরকারি আধিকারিককে। নীতাবেন গাভলি নামের ওই আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে গুজরাতের যুব ও সংস্কৃতি দফতর।
দেশের সরকারি শিক্ষায় সংঘের আদর্শকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলতে দীর্ঘদিনই চেষ্টা চালাচ্ছে সংঘ পরিবার। বরাবরই নাথুরাম গডসেকে নিয়ে দ্বিমুখী নীতি পোষণ করে সংঘ। আরএসএস প্রকাশ্যে নাথুরামের সঙ্গে যোগাযোগ অস্বীকার করে। আবার আরএসএসের শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের নানা কর্মসূচিতে নাথুরামকে স্থান দেয়।
এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের বিজেপিশাসিত গুজরাতে নাথুরামকে নিয়ে বিতর্কসভাও বেমানান না। তবে, এখনও সরকারিস্তরে নাথুরাম গডসে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী হিসেবেই নিন্দিত। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে এই মামলায় নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয়।
তারপরও নাথুরামকে নিয়ে বিতর্ক থামেনি। গডসেকে শহিদের মর্যাদা দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তাদের যুব সংগঠন বজরং দল। দেশজুড়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের চিন্তাধারায় বিশ্বাস রেখে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল চলে। গুজরাতে কুসুম বিদ্যালয়ও এমনই একটি স্কুল। সেই স্কুলেই আয়োজন করা হয়েছিল 'বাল প্রতিভা শোধ স্পর্শা' বা 'চাইল্ড ট্যালেন্ট সার্চ কম্পিটিশন'। যার বিষয় ছিল, 'মারো আদর্শ নাথুরাম গডসে' বা 'আমার আদর্শ নাথুরাম গডসে'। জেলাস্তরের এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিল গুজরাত সরকারের যুব এবং সংস্কৃতি দফতর।
আরও পড়ুন- বোরখা খোলানো নিয়ে তুলকালাম, পুলিশের সঙ্গে তুমুল বচসা
ভালসাদ জেলার ২৫টি স্কুলের আট থেকে ১২ বছর বয়সি পড়ুয়ারা এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় বিতর্ক শুরু হতেই কেউ অবশ্য এখন প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায় নিচ্ছে না। কুসুম বিদ্যালয় বলছে, তারা কেবল স্কুল চত্বর প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য দিয়েছিল। স্কুলের কেউ প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়নি।
আর, গুজরাতের যুব এবং সংস্কৃতি দফতর তো প্রথমে সবটাই অস্বীকার করেছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব সরব হতেই বলির পাঁঠা করা হল অফিসার নীতাবেন গাভলিকে। তিনি কেন সব দেখেও ব্যবস্থা নেননি, এটাই ওই অফিসারের অপরাধ।
Read story in English