বঙ্গে একুশের ভোটে বিজেপিকে 'বহিরাগত' বলে দেগে দিয়েছিল তৃণমূল। বছর দু'য়ের পর এবার সেই তত্ত্বেই জেরবার অবস্থা ঘাস-ফুল শিবিরের। এই ধ্বনি-কে 'জাতিগত আক্রমণ' বলে তোপ দেগেছেন বাংলার শাসক কূল। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ে 'বহিরাগত' বলে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।
আগামী সোমবার উত্তর-পূর্বের মেঘালয়ে ভোট হবে। বাংলার বাইরে পাহাড়ি এই রাজ্যে জিততে মরিয়া তৃণমূল। একাধিকবার প্রচারে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন অভিষেকও। মূলত কংগ্রেস ত্যাগী মুকুল সাংমার ক্যারিশমার উপর ভর করেই বৈতরণী পারের চেষ্টায় বাংলার শাসক দল।
বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙেছে এনপিপি-র। কিন্তু, ফের ক্ষমতায় ফিরতে প্রত্যয়ী মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। ভোটের আগে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একান্ত সাক্ষাৎকার মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী সে রাজ্যে তৃণমূলের লড়াই নিয়ে মুখ খুলেছেন। অকপটে তৃণমূলকে 'বহিরাগত' বলে তোপ দেগেছেন সাংমা।
এবার ভোটে মেগালয়ে প্রচারে হইহই ফেলেছে তৃণমূল। কংগ্রেসের দাবি, বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই পাহাড়ি রাজ্যে লড়াইয়ে নেমেছে তৃণমূল। মেঘালয়ের শাসক দল কি মুকুল সাংমার নেতৃত্বাধীন তৃণমূলকে এবারের ভোটে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেন, 'প্রত্যেক প্রতিপক্ষই যোগ্য বলে মনে করছি। বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল বা যেকোনও ছোট দল- আমি কাউকে হালকা ভাবে নিচ্ছি না। একথা ঠিক যে, কংগ্রেস থেকেই তৃণমূলের জন্ম। এখানে কংগ্রেস ভেঙে গিয়েছে। আবার তৃণমূল থেকেও চার-পাঁচজন বিধায়ক চলে গিয়েছেন। এখন তৃণমূলের হাতে গুটিকয়েক মাত্র বিধায়ক রয়েছে। আপনি যদি পরিস্থিতি ২০১৮ সালের কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনা করেন তবে তৃণণূল এখনও অনেক দুর্বল। কংগ্রেস একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দল ছিল। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তারা বিভক্ত।'
কিন্তু তৃণমূলের নেতৃত্বে রয়েছেন বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া ডঃ মুকুল সাংমা। সেটাই তো শাসকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ? কনরাডের যুক্তি, 'ডঃ মুকুল অনেক দিন ধরে রাজনীতিতে আছেন এবং তিনি একজন সিনিয়র নেতা- এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি যে কাজগুলো করতে পারতেন, বা তার চেয়েও বড় কথা, যে কাজগুলো তিনি করতে পারেননি, সেসব কাজ মানুষ দেখেছে। ২০১৮-তে কংগ্রেস ২১টি আসন পেলেও জোট গঠন করতে পারেনি। কারণ লোকেরা ডঃ মুকুল সাংমার নেতৃত্বকে মেনে নেননি। গতবার তাঁদের যে ফলাফল ছিল এবার তার থেকে ভাল হবে এই আশা করাটা খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে। নির্বাচন এত সহজ নয়।'
তৃণমূলকে ভয় যদি না পাবেন তাহলে কেন বাংলার শাসক দলকে মেঘালয়ে আপনি জাতিগত আক্রমণ করছেন? তৃণমূল এটাকে প্রচারে ইস্যু করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের সময়, ম্যাডাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে, তিনি বলেছিলেন যে বিজেপি একটি বহিরাগত দল। আমি সেই বক্তৃতার কথা উল্লেখ করছিলাম। যদি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বহিরাগত দল হয় তবে একই অঙ্কে তৃণমূলও মেঘালয়ে বহিরাগত। এতে জাতিগত আক্রমণের কিছু নেই, কারণ তারা পশ্চিমবঙ্গের একটি দল। যদি তারা মনে করে যে এটি জাতিগত, তবে তা দুঃখজনক। তাদের গর্ব করা উচিত যে তারা পশ্চিমবঙ্গের।'