মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক ডামাডোল চরমে। যেকোনও সময়ে পতন ঘটতে পারে জোট সরকারের। উদ্ধব ঠাকরের বিরুদ্ধে দলের নীতি ও আদর্শগত প্রশ্নে বিদ্রোহ করে বসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে। শিবসেনা নেতা একনাথ শিণ্ডের সাম্প্রতিক বিদ্রোহ চুয়াল্লিশ বছর আগে ১৯৭৮ সালে মহারাষ্ট্রে প্রায় একই বিদ্রোহের কথা মনে করিয়ে দেয়। যা ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন আর কেউ নয়, খোদ শারদ পাওয়ার। বসেই সময় পাওয়ার বসন্তদাদা পাতিল সরকারের পতন ঘটাতে সফল হয়েছিলেন। এছাড়া ৩৮ বছর বয়সে শরদ পাওয়ার মহারাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন।
তখন মাওয়াল বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন কৃষ্ণরাও ভেগদে। বর্তামেন ৮৭ বছরের প্রাক্তন রাজনীতিবিদ তখন ছিলেব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অংশ। ১৯৭৮ সালের বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে, ভেগদে বলছিলেন যে, সেই সময় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর স্তম্ভ ছিলেন শরদ পাওয়ার, গোবিন্দরাও আদিক এবং প্রতাপরাও ভোসল। ভেগদের কথায়, “আজ, হিন্দুত্ব ইস্যুতে শিবসেনায় ভাগ দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, বিদ্রোহী শিবসৈনিকদের দাবি তাঁরা এনসিপি দ্বারা অপমানিত। যা সেই সময় বলেছিলেন শরদ পাওয়াররা।'
ভেগদের কথায়, '১৯৭৮ সালে বিদ্রোহীরা সরকারের সঙ্গে পৃথক হওয়ার সিদ্ধান্তের প্রধান কারণই ছিল তাঁ সঙ্গে "অপমানজনক" আচরণ। উপ-মুখ্যমন্ত্রী নাশিকরাও তিরপুদে, যিনি কংগ্রেস (আই)তে ছিলেন, প্রকাশ্যে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পাতিল, পাওয়ার এবং তাঁর পরামর্শদাতা যশবন্তরাও চ্যাবনের সমালোচনা করেছিলেন৷ তিরপুদে এমন কিছু বলছিলেন যা পাওয়ার এবং তার ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের পছন্দ হয়নি।' উল্লেখ্য, শরদ পাওয়ার বসন্তদাদা পাতিল গোষ্ঠীর একজন মন্ত্রী ছিলেন
ভেগদে বলেন, '১৯৭৮ সালে জুলাইয়ের আগে তিন-চার মাস ধরে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল। অন্য দল গঠন এবং জনতা পার্টি, কৃষক ও ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিএমের মতো বিরোধী দলগুলির সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে আলোচনা প্রায় তিন থেকে চার মাস ধরে চলেছিল। তারপর হঠাৎ, বিধানসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন চলাকালীন ১৮ জুলাই পাওয়ার রাজ্যপালের কাছে যান এবং ৩৮ জন বিধায়ককে নিয়ে একটি নতুন দল গঠনের বিষয়ে চিঠি জমা দেন। তিনি অন্যান্য দলের সমর্থন সংক্রান্ত একটি চিঠি এবং আইনসভায় দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে আরেকটি চিঠি জমা দিয়েছিলেন। রাজ্যপাল তখন পাওয়ারকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তারপরই বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীনই পাওয়ার শপথ নিয়েছিলেন।'
ভেগদে ছিলেন পাওয়ারের গোষ্ঠীতেই। বিদ্রোহের জন্য ভেগদেদের সমর্থন চেয়েছিলেন পাওয়ারই?ভেগদে জানিয়েছেন, পাওয়ার তাঁর কাছে যাননি কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা পৃথক গোষ্ঠী গঠন করেছিলেন। এবং কেন সরকারের পতন প্রয়োজন ছিল তা বুঝিয়েছিলেন। ভেগদের দাবি, 'আমার মনে নেই পাওয়ার আমার বা অন্য বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কিনা। আমাদের সাধারণভাবে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছিল। পাওয়ারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।'
১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার পরে, কংগ্রেস দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল- বোলছিলেন ভেগদে। তাঁর কথায়, 'একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, যাকে বলা হয় কংগ্রেস (আই), আর অন্য দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডি দেবরাজ উরস, যা কংগ্রেস (উরস) নামে পরিচিত। দু'জনই আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পাওয়ার কংগ্রেসের (উরস) অংশ ছিলেন। যাইহোক, ১৯৭৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে, জনতা পার্টিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে উভয়েই হাত মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল'
ভেগদে বলেন, 'পাওয়ার-নেতৃত্বাধীন (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বা পুলোদ) জোট সরকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৮০সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরে আসার পরে তিনি পাওয়ারকে কংগ্রেসে যোগ দিতে বলেছিলেন। যদিও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পাওয়ার। ফলে তারপরই শরদ পাওয়ারের সরকারকে বরখাস্ত করেন ইন্দিরা।'
আরও পড়ুন- শিণ্ডেকে রুখতে মরিয়া উদ্ধব, অন্য কেউ বালাসাহেবের নাম ব্যবহার করতে পারবে না, সিদ্ধান্ত সেনার