কৃষিজীবী-প্রধান এলাকা। কিন্তু, ব্যাপক ভাবে খরাপ্রবণ। উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডকে এভাবেই চেনে গোটা ভারত। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে খরার চেয়েও বুন্দেলখণ্ডবাসীকে বেশি চিন্তায় ফেলেছে দলছুট গবাদি পশু। আরও স্পষ্ট করে বললে রাস্তা-ঘাটে, যেখানে- সেখানে একা একা গরু ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাতে বিপাকে পড়েছেন কৃষিজীবীরা। কারণ, যেটুকু ফসল হচ্ছে, দলছুট গরু তা খেয়ে নিচ্ছে। আচমকা এই গরুর সংখ্যা বাড়ার পিছনে অবশ্য যোগী সরকারই দায়ী বলে জানাচ্ছেন কৃষকরা।
বুন্দেলখণ্ডের কৃষকদের অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় এসে উত্তরপ্রদেশে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। একের পর এক কসাইখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবার, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলছুট গরু, বিশেষ করে ষাঁড়ের সংখ্যা। আর, সেই ষাঁড় খেতে ঢুকে পড়ছে। বেড়া দিলেও ষাঁড় এবং বড় আকারের গরু বেড়া ভেঙে দিচ্ছে। ফসল খেয়ে নিচ্ছে। তাতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকদের। তাঁরা খেত পাহারা দিতে বাধ্য হয়ে লোক রাখছেন। আর, এটাই যোগী সরকারের প্রতি কৃষিপ্রধান বুন্দেলখণ্ডবাসীর প্রধান ক্ষোভ।
এমনিতে উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের জন্য যোগী সরকার কম কিছু করেনি। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্প চালু করেছে। উন্নত বিদ্যুত পরিষেবা চালু করেছে। আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটিয়েছে। কিন্তু, যোগী সরকারের মুখে দলছুট গবাদি পশু নিয়ে একটা কথাও শোনা যায়নি এতদিনে। এমনকী, ভোটপ্রচারেও শোনা যায়নি। তাতেই বুন্দেলখণ্ডবাসী প্রশ্ন তুলছেন, 'তাহলে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' কীভাবে হল?
আরও পড়ুন ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদারের
পরিস্থিতি কিছুটা অবশ্যই বদলেছে। পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশ যাদবদের দাপটে তটস্থ থাকত। এখন যাদবদের সেই রমরমা নেই। কারণ, বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে ক্ষত্রিয় বাদে অন্য কোনও সম্প্রদায় প্রাধান্য পায় না। সামাজিক বদল বলতে এটুকুই। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সামলাতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গোশালা বানিয়ে দিয়েছে যোগী সরকার। টাকাও বরাদ্দ করেছে। কিন্তু, সেই সব গোয়ালের সংখ্যা যথেষ্ট না। গরুপ্রতি দৈনিক বরাদ্দও যথেষ্ট না-বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের।
সেই ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে কংগ্রেস জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তাঁরা গোরুর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেবেন। প্রত্যেক পঞ্চায়েত এলাকায় গোয়াল বানিয়ে দেবেন। পাশাপাশি, গোবরের ওপর বিভিন্ন প্রকল্প চালু করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনী ইস্তাহারেও সেই সব প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ, মোগায় সোনু সুদের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বিজেপি নেতৃত্ব এখন বলছেন, ইস্তাহারে না-থাকলেও ক্ষমতায় ফিরলে তাঁরাও ছাড়া গরুর কথা মাথায় রেখে কৃষকস্বার্থে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেবেন। ঘটাবেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ। বিজেপি কর্মীদের সেই প্রতিশ্রুতিতে এখন বুন্দেলখণ্ডবাসী কতটা আস্থা রাখেন, তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে উত্তরপ্রদেশের কুর্সির দখলদারি।