দিল্লির পর এবার পঞ্জাবে 'ইনকিলাব'। শীঘ্রই গোটা ভারতে 'ইনকিলাব' শুরু হবে। পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পরই আম আদমি পার্টির লক্ষ্যটা বুঝিয়ে দিলেন দলের সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনই যে এখন তাঁর পাখির চোখ, আপ সুপ্রিমোর কথায় কার্যত পরিষ্কার হয়ে গেল সেই লক্ষ্যই। কেজরিওয়ালের ভাষায়, ' পেহলে দিল্লি মে ইনকিলাব হুয়া, ফির পঞ্জাব মে ইনকিলাব হুয়া, ইসকে বাদ পুরা দেশ মে ইনকিলাব হোগা।'
পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে কোনও অভিযোগই আনতে বাদ দেননি বিরোধীরা। এমনকী, কেজরিওয়ালের গায়ে 'সন্ত্রাসবাদী' তকমাও লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। মানুষ তার জবাব দিয়েছে। পঞ্চনদের রাজ্য জয়ের পর ঠিক এই ভাষাতেই বিরোধীদের বৃহস্পতিবার জবাব দিলেন আপ সুপ্রিমো। পঞ্জাবে প্রথমবার ক্ষমতায় আপ। বাকিরা ধুয়েমুছে সাফ। আর, এটাই যে বিরোধীদের জবাব দেওয়ার মোক্ষম সময়, বৃহস্পতিবার তা বুঝিয়ে দিলেন আম আদমি পার্টির সর্বভারতীয় আহ্বায়ক। কেজরিওয়াল বলেন, 'এবারের বিধানসভা নির্বাচনে সব দলই আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে ছিল। কেজরিওয়ালকে প্রায় বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারাই সন্ত্রাসবাদী বলেছিলেন। দেশবাসী তার জবাব দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, কেজরিওয়াল সন্ত্রাসবাদী নন। তিনিই প্রকৃত দেশভক্ত।'
৭১ সালের পর থেকে হয় অকালি, নয়তো কংগ্রেসকেই শাসকদল হিসেবে দেখেছে পঞ্চনদের রাজ্য। এই প্রথম আপের ঝাড়ুতে সাফ হবে পঞ্জাবের পথঘাট। দিল্লি রাজ্য হলেও আধা ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে। তাই নিয়ে আপ আর বিজেপির টানাপোড়েনের জল নেহাত কমদূর গড়ায়নি। সেই হিসেবে এই প্রথম আম আদমি পার্টি প্রথম কোনও পূর্ণাঙ্গ রাজ্য শাসনের ভার পেল। তারমধ্যেই যে উন্নয়নের দিল্লি মডেল তাঁদের মন ছুঁয়েছে, তা ইভিএমে বুঝিয়ে দিলেন পঞ্জাবের জনতা।
স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার দিল্লি মডেল তাঁরা পঞ্জাবেও চালু করতে চান। নির্বাচনী প্রচারে সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সেই প্রতিশ্রুতি যে তাঁরা ক্ষমতায় এসে রক্ষা করবেন, বৃহস্পতিবার তা স্পষ্ট করে দিলেন আপ সুপ্রিমো। কেজরিওয়াল বলেন, 'ভগত্ সিং একবার বলেছিলেন, স্বাধীনতার পর যদি আমরা ব্যবস্থা না-বদলাই, তাহলে কোনও উপকারই হবে না। গত ৭৫ বছরে এই সব দল ও রাজনীতিবিদরা ব্রিটিশদের ব্যবস্থাই রেখে দিয়েছেন। তাঁরা কোনও হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেননি। আপ গত সাত বছরে এই ব্যবস্থাই বদলেছে। আমাদের সবাইকে এক নতুন ভারত গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। যেখানে কোনও ঘৃণা থাকবে না। যেখানে আমাদের বোন এবং মায়েরা নিরাপদে থাকতে পারবেন। যেখানে ধনী থেকে দরিদ্র, সবাই সুশিক্ষা পাবেন। এমন এক ভারত গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে।'
আরও পড়ুন- প্যালেস্তাইনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুতে রহস্য, আদালতে পরিবার
পঞ্জাবে এবার আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন ভগবন্ত মান। প্রাক্তন কমেডিয়ান মান যে কমেডি অনুষ্ঠানের প্রতিযোগী ছিলেন, সেই অনুষ্ঠানের বিচারক ছিলেন পঞ্জাব কংগ্রেসের নেতা নভজ্যোত্ সিং সিধু। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনী ফল জানাল, নেতা হিসেবে সেই প্রতিযোগী ফুল মার্কস পেয়েছেন। কিন্তু, বিচারক ফিরলেন শূন্য হাতে। শুধু সিধুই নন। বিরোধী শিবিরের বহু তাবড় নেতা এবারের পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত আপের জোয়ারে ভেসে গিয়েছেন। দলের জয়ের পর সেনিয়ে কটাক্ষ শোনা গেল কেজরিওয়ালের গলায়। তিনি বললেন, 'বড়ি বড়ি কুর্সিয়া হিল গ্যয়ি হ্যায় পঞ্জাব মে। সুখবীর সিং বাদল হার গ্যয়ে। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং স্যার হার গ্যয়ে। চান্নি স্যার হার গ্যয়ে। নভজ্যোত্ সিং সিধু হার গ্যয়ে।' সত্যিই এ 'ইনকিলাব'ই বটে।
Read story in English