শুধু সঙ্কট নয়, একেবারে মহাসঙ্কটে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকার। জোটের প্রধান শরিক শিবসেনার শীর্ষ নেতা ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী একনাথ শিন্ডে গুজরাটের সুরাটে বেশ কয়েকটি দলের বিধায়কদের নিয়ে গিয়েছেন বলে খবর। শিন্ডে রয়েছেন মোদীর রাজ্য গুজরাটের সুরাটে। তাহলে কি মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটকের মতো মহারাষ্ট্রেও এবার অপরেশন লোটাস? প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল যে, কমপক্ষে ১২ জন বিধায়ক নিয়ে সুরাটেরয়েছেন শিন্ডে। কিন্তু পরে জানা যায় শিন্ডের সঙ্গে থাকা বিধায়কদের সংখ্যা প্রায় ২০।
যদিও সরকার কোনও সঙ্কটের সম্মুখীন বলতে মানতে রাজি নন সেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। একই মত কংগ্রেসেরও। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের দাবি, 'মহারাষ্ট্রে তৃতীয়বার সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে বিজেপি। মুম্বইতে ফিরে কথা বলব সব শরিকদের সঙ্গে। কিছিনা কিছু সমাধান বের হবে। তবে শিন্ডে রাগ করেছেন কিনা তা শিবসেনার অভ্যন্তরীণ বিষয়।'
গত কয়েক মাস ধরেই আগাদি জোটে মতভেদের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। সম্প্রতি রাজ্যসভা ভোট ও বিধান পরিষদের ভোটেও তার উদাহরণ মিলেছে। শাসক জোটের অন্দরের বিবাদে লাভের গুড় ঘরে তুলেছে বিজেপি। এবার শিন্ডেকে দলে টেনে ফড়নবীশ মহারাষ্ট্রের ফের বিজেপিকে ক্ষমতায় বসাতে মরিয়া। কিন্তু, শিন্ডের সঙ্গে কতজন সেনা বিধায়কের সমর্থন রয়েছে? তিনি একা বিজেপিতে যোগ দিলে তো দলত্যাগ বিরোধী আইনের মুখোমুখি হতে হবে, বাতিল হতে পারে তাঁর বিধায়ক পদ। এইসবে এখন নজর রাখছে গেরুয়া বাহিনী।
দলত্যাগ বিরোধী আইনমোতাবেক, বিধানসভায় একটি দলের শক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বিধায়ক একযোগে দলত্যাগ করে তবে সেইসব বিধায়কের পদ বাতিল হয় না। বর্তমানে বিধানসভায় সেনার আসন সংখ্যা ৫৫। বিদ্রোহীরা যদি বিজেপির সঙ্গে যেতে চায়, তাহলে ৩৭ জন বিধায়ককে (৫৫-এর দুই-তৃতীয়াংশ) একযোগে অন্য দলে নাম লেখাতে হবে। এক্ষেত্রে সেনা বিধায়করা দলত্যাগ আইনের মুখোমুখি হবেন না।
ক্ষমতাসীন জোটের অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে বিধানসভায় উদ্ধব ঠাকরে সরকারের সমর্থনে আস্থা ভোটের দাবি তুলতে পারে পদ্ম শিবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, 'আমরা প্রকাশ্যে বলেছি যে মহা বিকাশ আগাদি জোটের অভ্যন্তরে ব্যাপক অস্থিরতা রয়েছে। বিধান পরিষদ পর্ষদ নির্বাচনের পরে, আরও প্রকট যে কীভাবে সেনা এবং কংগ্রেস তাদের নিজস্ব বিধায়ক এবং ছোট শরিক দল এবং নির্দলদের আস্থা হারিয়েছে।' যদিও বিজেপি তার কৌশল গোপন রেখেছে।
শিন্ডে নিজের দলের উপর অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে তাঁকে সরানো হয়েছে এবং দলীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও কৌশল প্রণয়নে তাঁর মতামত গুরুত্ব পায়নি। সম্প্রতি থানে পুরনিগম নির্বাচনে একা লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন শিন্ডে। কিন্তু, শিবসেনা তা মানেনি। উল্টে শিন্ডেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, শিবসেনা জোটের অপর দুই শরিক কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
এই জটিল পরিস্থিতিতে সেনা প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, মঙ্গলবারই দলের নেতা ও বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছেন। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, জোট শরিক এনসিপি এবং কংগ্রেসও ঠাকরের কাছে এ নিয়ে কথাও বলেছে।
এমএলসি পোল নম্বর
সোমবার বিধান পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ২৮৫ জন। এর মধ্যে বিধানসভার ২৪৪ জন বিধায়ক রয়েছে। তবে সেনা বিধায়ক রমেশ লাটকে গত মাসে প্রয়াত হয়েছেন, এবং এনসিপি সদস্য নবাব মালিক এবং অনিল দেশমুখ অর্থ পাচারের মামলায় জেলবন্দি।
শিবসেনার ৫৫ বিধায়ক, এনসিপি ৫৩ এবং কংগ্রেস ৪৪। বিজেপির ১০৬ বিধায়ক রয়েছে। ছোট দল এবং নির্দল বিধায়কদের শক্তি ২৯। ফলাফলের ভিত্তিতে, বিজেপি ১৩৩ ভোট পেয়ে মোট পাঁচজন প্রার্থীকে পরিষদে পাঠিয়েছে। মহাবিকাশ আগাদি জোটের প্রার্থীরা ১৫২ ভোট পেয়েছে। ফলে স্পষ্ট যে জোটের মধ্যে ফাটল ধরেছে।