নিরুদ্দেশ সাংসদ সানি দেওল। ২০১৯ সালের লোকসভার পর তাঁকে মাত্র একবার পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরে নিজের সংসদীয় এলাকায় দেখা গিয়েছিল, সেই শেষ। এতেই ক্ষুব্ধ ভোটাররা। বিজেপির অন্দরেও দলীয় সাংসদের এহেন কার্যকলাপে অসন্তোষ রয়েছে। বিরোধী শিবির সানির আচরণ নিয়ে প্রচার শুরু করার বিজেপির অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
অভিনেতা থেকে নেতা হয়েছেন সানি দেওয়ল। ২০১৯ সালে পাঞ্জবের গুরুদাসপুর সংসদীয় এলাকা থেকে পদ্ম প্রতীকে লড়াই করে জয় হাসিল করেছিলেন। পরাজিত করেছিলেন কংগ্রেসের সুনীল জাখরকে। সেই সুনীল এখন হাত ছেড়ে গেরুয়া দলের নেতা। জয়ের পর মাত্র একবার ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গুরুদাসপুরে পা পড়েছিল সানির। শেষবার নিজের সংসদীয় এলাকা নিয়ে তাঁকে সক্রিয় হতে দেখা যায় চলতি বছর মে মাসে। তাও টুইটে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূস গোয়েলের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন সাংসদ। দাবি করেছিলেন যে, নিজেরতার নির্বাচনী এলাকার "একটি উলেন মিলের কর্মচারীদের সমস্যা" নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পাঞ্জাবের বিধানসভা ভোটেও দলের হয়ে প্রচার করেনি। যদিও তাঁকে তারকা প্রচারকের তালিকাতেই রেখেছিল দল। পাঠানকোটে মোদীর সভাতেই সেই সময় হাজির হননি দেওল। পাঞ্জাবের ভোট পরাজিত বিজেপি। কেন প্রচার করলেন না সাংসদ? সেই ,ময় অস্বস্তি ঢাকতে বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, কোভিড মহামারির কারণে কমিশনের নির্দেশে একসঙ্গে সকলে প্রচার করতে পারবেন না। তাই সানি প্রচারে যোগ দেননি। পরে প্রচার করবেন তিনি। যদিও তা বাস্চবায়িত হয়নি।
সদ্য হওয়া রাষ্ট্রপতি ভোটেও গুরুদাসপুরের বিজেপি সাংসদকে বিধানসভায় ভোট দিতে আসতে দেখা যায়নি। ফলে সানি দেওয়লকে নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে।
সানি দেওলের এই কার্যকলাপে ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপিতে। সেই সময় সানি প্রার্থী হওয়ায় গুরুদাসপুরে দলের যাঁরা টিকিঠ পাননি তাঁরা সক্রিয় হচ্ছেন। এরকমই এক নেতা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'দলের নেতারা আশা করেন যে দেওলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তার বাবা ধর্মেন্দ্রের মতোই শেষ হয়ে যাবে এবং তিনি২০২৪ সালে আর টিকিটের দাবি করতে পারবেন না। ফলে স্থানীয় বিজেপি নেতারা লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের সুযোগ পাবেন। যাঁরা গতবার সানি দেওল প্যারাসুট মতো এখানে চলে আসায় টিকিটের জন্য প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল তাঁদের এবার সুযোগ রয়েছে।'
আরেক বিজেপি নেতার দাবি, 'দেওলকে আর প্রার্থী করা হবে না। তিনি এখন দু-একবার এলেও কোনও প্রভাব পড়বে না। বিজেপির যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এরপর যেই হোন সেই বিজেপি প্রার্থীকে মানুষের অসন্তোষ দূর করতে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। মানুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভালোবাসে সানি দেওলকে গুরুদাসপুরে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু সানি সব শেষ করে দিলেন।'
কংগ্রেস বিধায়ক এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুখজিন্দর সিং রনধাওয়া সানির অভিনেতা থেকে সাংসদ হওয়াকে ব্যাঙ্গ করেছেন। রনধাওয়া, যার নির্বাচনী এলাকা ডেরা বাবা নানক গুরুদাসপুর সংসদীয় আসনের অংশ, প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, 'গুরুদাসপুরের মানুষ প্রতারিত বোধ করেন, কারণ মনে হচ্ছে তাঁরা সংসদে একজন অদৃশ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছে। নির্বাচনী এলাকায় সাংসদকে কখনো দেখা যায়নি। এমনকি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও তিনি ভোট দেননি। এটা স্পষ্ট যে সানি দেওল মানুষের পাশাপাশি বিজেপির কোন কাজে আসছে না। গুরুদাসপুর থেকে সানিকে ইস্তফা দিতে বলা প্রয়োজন। গুরুদাসপুর থেকে একজন নতুন এমপি নির্বাচিত করার জন্য উপনির্বাচন হওয়া দরকার যিনি জনগণের সমস্যাগুলি উত্থাপন করতে পারেন। গুরুদাসপুরের জনগণের একজন উপযুক্ত সাংসদ পাওয়ার অধিকার রয়েছে।'
গুরুদাসপুরে দেওলের অনুপস্থিতি এই প্রথম নয়। ২০২১ সালের জুনে, যুব কংগ্রেস কর্মীরা এমপির ছবির হাতে "নিখোঁজ ব্যক্তি" পোস্টার লাগিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। পোস্টারে লেখা ছিল 'গুমশুদা কি তালাশ এমপি সানি দেওল (নিখোঁজ এমপি সানি দেওলের সন্ধান করুন)।'
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সানি দেওলের বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংসদের প্রতিক্রিয়া নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে তিনি মুখ খোলেননি। তবে, সানি দেওলের মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মুথপাত্রের দাবি, 'সাংসদ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় মসৃণভাবে কাজের জন্য একজন ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ করেছিলেন। তিনিই সব দেখভাল করেন।' তাঁর সংযোজন, 'সানি দেওল ছাড়া বিজেপির পক্ষে গুরুদাসপুরে কেউ জিততে পারতেন না। সুনীল জাখর এখন বিজেপিতে। তিনি কংগ্রেসে ছিলেন এবং হিন্দু ও শিখ উভয়ের মধ্যেই জনপ্রিয় ছিলেন। সানি দেওল না থাকলে সুনীলজি জিতে যেত। তবে এটা ঠিক যে দেওলকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।'