উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মণিপুর- পাঁচ রাজ্যের চারটিতেই জয় এসেছে। দলীয় কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে যাকে 'জিত কা চৌকা' বলে সম্বোধন করলেন নরেন্দ্র মোদী। কথা ছিল, জয়ের পর তিনি বিজেপির সদর দফতরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সম্বোধন করবেন। সঙ্গে থাকবেন অমিত শাহ। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে শাহ না। মোদীর সঙ্গে দলের সদর কার্যালয়ে উচ্ছ্বসিত কর্মীদের সামনে উপস্থিত থাকলেন সভাপতি জগত্প্রকাশ নাড্ডা।
একসময় বিজেপির অভ্যন্তর এবং বিরোধী রাজনীতিতে মোদীর সঙ্গে শাহর নামটা বারবার উঠে এলেও ইদানিং শাহকে তাঁর একসময়ের রাজনৈতিক গুরু নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে খুব একটা মঞ্চে দেখা যায়নি। বেশ কিছুদিন আগে মেঘালয়ের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক তো শাহকে উদ্ধৃত করেই মোদীর সম্পর্কে একাধিক কুকথা বলেছিলেন। অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দিয়ে বিষয়টি বাড়তে দেননি মোদী নিজেই। বৃহস্পতিবার আবার যেমন মোদীর সঙ্গে দলের 'অকাল হোলি' শুরুর মঞ্চে শাহর অনুপস্থিতি চাপা পড়ে গেল কর্মী-সমর্থকদের জয়ের উচ্ছ্বাসে।
আর, উচ্ছ্বাস হবে না-ই বা কেন? উত্তরপ্রদেশের রামমন্দির আন্দোলনের লেজ ধরেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপির প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠা। সেই উত্তরপ্রদেশেই বিজেপির পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে রেকর্ড গড়েছে দল। ক্ষমতায় থেকে ফের গোবলয়ের এই রামরাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৮৫ সালের পর ক্ষমতাসীন দলের ফের উত্তরপ্রদেশের তখতে বসার বসার ঘটনা ফের ঘটল এইবার।
সংঘ পরিবারের যাঁরা অযোধ্যার আন্দোলনকে কাশী-মথুরার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের থেকে যেন একধাপ এগিয়ে মোদী। 'অযোধ্যা পে ঝাঁকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়'- নীতি অক্ষরে অক্ষরে মেনেই মোদী-যোগী ডবল ইঞ্জিন সরকারের জমানায় রামমন্দিরের কাজ অনেক এগিয়েছে। বিশ্বেশ্বর মন্দির থেকে শুরু করে নবসাজে গোটা কাশী। গোহত্যাও বন্ধ হয়েছে উত্তরপ্রদেশে।
বৃহস্পতিবার সেই হিন্দুত্ববাদের ফলও মিলল হাতেনাতে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ২৫৫। সেখানে প্রধান বিরোধী সমাজবাদী পার্টি স্রেফ ১১০। আদিত্যনাথ নিজে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শুভায়তী শুক্লার চেয়ে ৭৭ হাজার ভোটে এগিয়ে জয় পেয়েছেন। বিজেপি পেয়েছে ৪১.৬ শতাংশ ভোট।
আরও পড়ুন- আত্মনির্ভর ভারত, সবকা সাথ সবকা বিকাশের মন্ত্র আউড়ানো মোদীর বক্তব্যে ঘুরেফিরে ২০২৪
মোদির পর হিন্দুত্ববাদী ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ অথচ সুশাসনের কান্ডারি হিসেবে যোগী আদিত্যনাথই সংঘের প্রথম পছন্দ। ২০২৪-এ যদিও বা মোদীই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী থাকেন, ২০২৯-এ কি আর তিনি থাকবেন? মুখ বদলে বিশ্বাসী সংঘ মাত্র কয়েক বছর আগে দলের লৌহপুরুষ লালকৃষ্ণ আদবানির হাত থেকেও ব্যাটন কেড়ে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশে সুশাসনে হাত পাকানো যোগীর রাস্তা খুলে যেতেই পারে হিন্দুত্বের ধ্বজা ধরে। ২৪-এ না-হলেও ২৯-এ তা সম্ভব। আর, সেটা বুঝেই কি গোঁসা হয়েছে শাহর! তিনি কি বুঝতে পেরেছেন, ২৪-এও তাঁকে থেকে যেতে হবে মোদির ছায়াতেই?
Read story in English