ছয় দশক আগে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পয়েছিল নাগাল্যান্ড। তারপর একাধিকবার উত্তরপূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্যে সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু, বিধানসভায় কোনও দলেরই একজনও মহিলা বিধায়ক ছিল না। অর্থাৎ নারী বর্জিত ছিল নাগাল্যান্ড বিধানসভা। কিন্তু এবার সেই ঘাটতি মিটল। ডিমাপুর-৩ কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেন ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির হেকানি জাখালু। তিনিই সে রাজ্যের প্রথম মহিলা বিধায়ক।
ডিমাপুর-৩ কেন্দ্র থেকে হেকানি জাখালু পেয়েছেন ৩১,৮৭৪ ভোট। যা শতাংশের বিচারে ৪৫.১৬ শতাংশ। ইতিহাসের পাতায় নাম তুলতে হেকানি হারিয়েছেন লোক জনশক্তি পার্টির অ্যাঝেটো ঝিমোমিকে। শতাংশের বিচারে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৪০.৩৪ শতাংশ।
নাগাল্যান্ডের প্রথম মহিলা বিধায়ক হেকানি জাখালু দিল্লির লেডি শ্রী রাম মহিলা কলেজ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়েছেন। এরপর আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম করেন। পরবর্তীকালে তিনি দিল্লির একটি ল ফার্মে কাজ করতেন। ২০০৫ সালে তিনি YouthNet নামে একটি এনজিও শুরুর চেষ্টায় নাগাল্যান্ডে ফিরে আসেন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সে রাজ্যের যুব সমাজের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করা।
এর ফাঁকেই জাখালু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এক্সিকিউটিভ এডুকেশন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে শিশু ও মহিলা উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে নারী শক্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। পরে এনডিপিপি নেতা তথা রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েই সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন জাখালু। ওই দলের পতাকা নিয়েই দাঁড়ান নির্বাচনে। শেষে জয় মেলে।
বিধায়ক হেকানি জাখালুর আগ্রাধিকার কোন কাজ? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ৪৮ বছর বয়সী জাখালু বলেছেন, '১৭ বছর ধরে আমি এনজিও-র মাধ্যমে তরুণদের জন্য কাজ করছি, কিন্তু সেই অবস্থান থেকে নির্দিষ্ট কাজ করা সম্ভব। এই কারণেই আমি আইন প্রণেতার কাজ করতেচেয়েছিলাম। রাজ্যের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বিধানসভায় প্রবেশ করতে চেয়েছিলাম। সুতরাং, রাজ্যে এবং আমার নির্বাচনী এলাকায়, আমার নজর থাকবে তরুণ-তরুণীদের প্রতি। তাদের গড়ে তোলা এবং তাদের লালন-পালন করা, এবং অবশ্যই, একজন মহিলা বিধায়ক হিসাবে আমিও মহিলাদের জন্য লড়াই করব।'
জাখালুর সংযোজন, 'আমার অন্যতম লক্ষ্য ডিমাপুর-৩ কেন্দ্রকে একটি মডেল নির্বাচনী এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা। এটি অনেক দিন ধরেই অবহেলিত। আমি চাই প্রত্যেকের তাদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার ভোগ করুক। আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যও লড়াই করব। তারা রাজ্যের জনসংখ্যার অর্ধেক এবং তারাও নির্বাচনী এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রীদের নির্বাচন করছে। কিন্তু একবার বিধায়করা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে তারা মানুষকে ভুলে যান। এই নিয়ম ভাঙতে চাইছি।'
এই জয় আসলে 'কেবল প্রথম যুদ্ধ জেতা' বলে দাবি জাখালুর। তার সাফ কথা, 'আশা করছি মন্ত্রিসভায় ভাল পোর্টফোলিও পাব। দল আমার সঙ্গে এ নিয়ে আগেই কথা বলেছিল।'