লখিমপুর খেরির সেই নৃশংসা ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে কংগ্রেস। এবার সেই ভিডিও দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর লখনউ সফরের আগে মঙ্গলবার একটি ভিডিও টুইট করেছেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক। সেই ভিডিও বার্তায় তিনি মোদীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন লখিমপুর কাণ্ড নিয়ে।
সোমবারই গৃহবন্দি করা হয় প্রিয়াঙ্কাকে। তাঁকে লখিমপুরে যেতে দেয়নি উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। এদিন লখিমপুরের সেই ভয়াবহ কাণ্ডের ভিডিও দেখিয়ে তিনি মোদীকে প্রশ্ন করেন, "প্রধানমন্ত্রীজি আপনি কি এই ভিডিওটা দেখেছেন?" ক্যামেরার সামনে তিনি নিজের মোবাইল ফোনটি ধরেন। তাতে দেখা যাচ্ছিল, কীভাবে একটি এসইউভি গাড়ি কিছু মানুষকে পিষে দিচ্ছে। তিনি আরও প্রশ্ন করেছেন, "এখনও কেন এই মানুষটিকে গ্রেফতার করা গেল না! আমাদের মতো নেতা-নেত্রীকে লখিমপুর খেরিতে যেতে আটকানো হল। কোনও এফআইআর ছাড়া গৃহবন্দি করা হল। তাহলে কেন এই লোকটা এখনও ছাড়া রয়েছে, আমি জানতে চাই।"
তিনি এও জানতে চেয়েছেন, "কেন এখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রকে অপসারণ করা হয়নি।" কৃষকদের দাবি, লখিমপুরে যে গাড়িটি রবিবার কৃষকদের পিষে দিয়েছে সেটি মন্ত্রীর ছেলে আশিস মিশ্রর কনভয়ের অংশ। প্রিয়াঙ্কার তোপ, "যখন আপনি আজাদির মহোৎসবে মঞ্চে বসে থাকবেন, তখন মনে রাখবেন আমরা আমাদের কৃষকদের জন্য স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এমনকী আজও, তাঁদের সন্তানরা সীমান্ত রক্ষা করেন। আমাদের কৃষকরা বহু মাস ধরে সমস্যায় আছেন। তাঁরা আওয়াজ তুললেও আপনারা তা কানে দিচ্ছেন না।" প্রিয়াঙ্কার আবেদন, প্রধানমন্ত্রী যেন অবশ্যই লখিমপুরে যান।
প্রসঙ্গত, ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, আন্দোলনরতদের একটি দল এগিয়ে যাচ্ছিল কৃষিখেতের ধারে একটি রাস্তার দিকে। তখনই পিছন থেকে গাড়িটি গতি বাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। একজন চলন্ত গাড়ির বনেটে লাফ দেন গাড়ি ধাক্কা মারতেই। তারপর সামনে সবাইকে পিষে বেরিয়ে যায় গাড়িটি। ততক্ষণে বেশ কয়েকজনের দেহ রাস্তার ধারে দলা পাকিয়ে পড়েছিল।
কৃষকরা এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, কয়েক দিন আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র কৃষকদের উদ্দেশে যে ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। গুরমিত সিং নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, “সেদিন গাড়িগুলি কৃষকদের পিষে দেওয়ার সময় জিগজ্যাগ কায়দায় এগিয়ে যায়। তার মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন মন্ত্রীর ছেলে আকাশ মিশ্র। আমাদের এক নেতা তেজেন্দর সিং ভির্ককে গাড়ি পিষে অনেকটা দূরে টেনে নিয়ে যায়। কেউ কেউ গাড়ির নীচে আটকে যান। কিন্তু গাড়ি থামেনি। আমার চোখকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।”
আরও পড়ুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উস্কানি থেকে গাড়ির চাকায় পিষ্ট কৃষকরা, যে কারণে হিংসা ছড়াল লখিমপুরে
এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “মন্ত্রীর ছেলে বুঝতে পারেননি যে এত মানুষের জমায়েত হবে। তাই তিনি পালাতে গিয়েছিলেন, যার ফলে এই ঘটনা হয়।” অজয় মিশ্র কয়েকদিন আগে যে মন্তব্য করে উত্তেজনা বাড়িয়েছিলেন সেটা ছিল, “এই দেশ কৃষকদের দেশ। আমিও কৃষক। আপনারাও। আমরা যদি রাস্তায় নামতাম তাহলে ওদের পালানোর পথ থাকত না। পিছনে কাজ করার লোক। এরকমই ১০-১৫ জন চেঁচামেচি করে। যদি কৃষি আইন খারাপ হত তাহলে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ত।”
তিনি আরও বলেন, “এরকম লোকদের বলতে চাই, শুধরে যান। নাহলে সামনাসামনি এসে শুধরে দেব আমরা। দুই মিনিট লাগবে শুধু।” ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের লখনউ শাখার প্রধান দিলবাগ সিং বলেছেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ্যে ২৫ সেপ্টেম্বর এই হুমকি দেওয়ার পর উত্তেজনা বাড়ে এলাকায়।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন